সূরা আল আনআম

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে,

নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন

সূরা আল আনআম

৬-১ : সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌রই যিনি আস্‌মান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন, আর সৃষ্টি করিয়াছেন অন্ধকার ও আলো। এতদ্‌সত্ত্বেও কাফিরগণ তাহাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়।

সূরা আল আনআম

৬-২ : তিনিই তোমাদেরকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর এক কাল নির্দিষ্ট করিয়াছেন এবং আর একটি নির্ধারিত কাল আছে যাহা তিনিই জ্ঞাত, এতদ্‌সত্ত্বেও তোমরা সন্দেহ কর।

সূরা আল আনআম

৬-৩ : আসমান ও যমীনে তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যাহা অর্জন কর তাহাও তিনি অবগত আছেন।

সূরা আল আনআম

৬-৪ : তাহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীর এমন কোন নিদর্শন তাহাদের নিকট উপস্থিত হয় না যাহা হইতে তাহারা মুখ না ফিরায়।

সূরা আল আনআম

৬-৫ : সত্য যখন তাহাদের নিকট আসিয়াছে তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। যাহা লইয়া তাহারা ঠাট্টা - বিদ্রূপ করিত উহার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাহাদের নিকট পৌঁছিবে।

সূরা আল আনআম

৬-৬ : তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি ? তাহাদেরকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদেরকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।

সূরা আল আনআম

৬-৭ : আমি যদি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করিতাম আর তাহারা যদি উহা হস্ত দ্বারা স্পর্শও করিত তবুও কাফিরগণ বলিত, ‘ইহা স্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।’

সূরা আল আনআম

৬-৮ : তাহারা বলে, ‘তাহার নিকট কোন ফিরিশ্‌তা কেন প্রেরিত হয় না ?’ যদি আমি ফিরিশ্‌তা প্রেরণ করিতাম তাহা হইলে চূড়ান্ত ফয়সালাই তো হইয়া যাইত; আর তাহাদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হইত না।

সূরা আল আনআম

৬-৯ : যদি তাহাকে ফিরিশ্‌তা করিতাম তবে তাহাকে মানুষের আকৃতিতেই প্রেরণ করিতাম; আর তাহাদেরকে সেরূপ বিভ্রমে ফেলিতাম, যেরূপ বিভ্রমে তাহারা এখন রহিয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-১০ : তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা - বিদ্রূপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টা - বিদ্রূপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রূপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করিয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-১১ : বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল।’

সূরা আল আনআম

৬-১২ : বল, ‘আসমান ও যমীনে যাহা আছে তাহা কাহার ?’ বল, ‘আল্লাহ্‌রই’ দয়া করা তিনি তাঁহার কর্তব্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই একত্র করিবেন - ইহাতে কোনই সন্দেহ নাই। যাহারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করিয়াছে তাহারা ঈমান আনিবে না।

সূরা আল আনআম

৬-১৩ : রাত্রি ও দিবসে যাহা কিছু থাকে তাহা তাঁহারই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল আনআম

৬-১৪ : বল, ‘আমি কি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করিব? তিনিই আহার্য দান করেন কিন্তু তাঁহাকে কেহ আহার্য দান করে না’; এবং বল, ‘আমি আদিষ্ট হইয়াছি যেন আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমি প্রথম ব্যক্তি হই’; আমাকে আরও আদেশ করা হইয়াছে, ‘তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।’

সূরা আল আনআম

৬-১৫ : বল, ‘আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি তবে আমি ভয় করি মহাদিনের শাস্তির।

সূরা আল আনআম

৬-১৬ : ‘সেই দিন যাহাকে উহা হইতে রক্ষা করা হইবে তাহার প্রতি তিনি তো দয়া করিবেন এবং ইহাই স্পষ্ট সফলতা।’

সূরা আল আনআম

৬-১৭ : আল্লাহ্ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত উহা মোচনকারী আর কেহ নাই। আর তিনি তোমার কল্যাণ করিলে তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে শক্তিমান।

সূরা আল আনআম

৬-১৮ : তিনি আপন বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী, তিনি প্রজ্ঞাময়, জ্ঞাতা।

সূরা আল আনআম

৬-১৯ : বল, ‘সাক্ষ্যতে সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় কী ?’ বল, ‘আল্লাহ্ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদেরকে এবং যাহার নিকট ইহা পৌঁছিবে তাহাদেরকে এতদ্‌দ্বারা আমি সতর্ক করি। তোমরা কি এই সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্‌র সঙ্গে অন্য ইলাহ্ও আছে? বল, ‘আমি সে সাক্ষ্য দেই না।’ বল, ‘তিনি তো এক ইলাহ্ এবং তোমরা যে শরীক কর তাহা হইতে আমি অবশ্যই নির্লিপ্ত।’

সূরা আল আনআম

৬-২০ : আমি যাহাদেরকে কিতাব দিয়াছি তাহারা তাহাকে সেইরূপ চেনে যেইরূপ চেনে তাহাদের সন্তানগণকে। যাহারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করিয়াছে, তাহারা বিশ্বাস করিবে না।

সূরা আল আনআম

৬-২১ : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁহার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাহার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে ? জালিমরা আদৌ সফলকাম হয় না।

সূরা আল আনআম

৬-২২ : স্মরণ কর, যেদিন তাহাদের সকলকে একত্র করিব, অতঃপর মুশরিকদেরকে বলিব, ‘যাহাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করিতে, তাহারা কোথায় ?’

সূরা আল আনআম

৬-২৩ : অতঃপর তাহাদের ইহা ছাড়া বলিবার অন্য কোন অজুহাত থাকিবে না : ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।’

সূরা আল আনআম

৬-২৪ : দেখ, তাহারা নিজেদের প্রতি কিরূপ মিথ্যা আরোপ করে এবং যে মিথ্যা তাহারা রচনা করিত উহা কিভাবে তাহাদের নিকট হইতে উধাও হইয়া গেল!

সূরা আল আনআম

৬-২৫ : তাহাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পাতিয়া রাখে, কিন্তু আমি তাহাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়াছি যেন তাহারা তাহা উপলব্ধি করিতে না পারে; তাহাদেরকে বধির করিয়াছি এবং সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করিলেও তাহারা উহাতে ঈমান আনিবে না; এমনকি তাহারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হইয়া বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিরগণ বলে, ‘ইহা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’

সূরা আল আনআম

৬-২৬ : তাহারা অন্যকে উহা শ্রবণে বিরত রাখে এবং নিজেরাও উহা হইতে দূরে থাকে, আর তাহারা নিজেরাই শুধু নিজেদেরকে ধ্বংস করে, অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

সূরা আল আনআম

৬-২৭ : তুমি যদি দেখিতে পাইতে যখন তাহাদেরকে দোজখের পার্শ্বে দাঁড় করান হইবে এবং তাহারা বলিবে, ‘হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করিতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হইতাম!’

সূরা আল আনআম

৬-২৮ : না, পূর্বে তাহারা যাহা গোপন করিত তাহা এখন তাহাদের নিকট প্রকাশ পাইয়াছে এবং তাহারা প্রত্যাবর্তিত হইলেও যাহা করিতে তাহাদেরকে নিষেধ করা হইয়াছিল পুনরায় তাহারা তাহাই করিত এবং নিশ্চয় তাহারা মিথ্যাবাদী।

সূরা আল আনআম

৬-২৯ : তাহারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হইব না।’

সূরা আল আনআম

৬-৩০ : তুমি যদি দেখিতে পাইতে তাহাদেরকে যখন তাহাদের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করান হইবে এবং তিনি বলিবেন, ‘ইহা কি প্রকৃত সত্য নয় ?’ তাহারা বলিবে, ‘আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই সত্য।’ তিনি বলিবেন, ‘তবে তোমরা যে কুফরী করিতে তজ্জন্য তোমরা এখন শাস্তি ভোগ কর।’

সূরা আল আনআম

৬-৩১ : যাহারা আল্লাহ্‌র সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলিয়াছে তাহারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, এমনকি অকস্মাৎ তাহাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হইবে তখন তাহারা বলিবে, ‘হায় ! ইহাকে আমরা যে অবহেলা করিয়াছি তজ্জন্য আক্ষেপ !’ তাহারা তাহাদের পৃষ্ঠে নিজেদের পাপ বহন করিবে ; দেখ, তাহারা যাহা বহন করিবে তাহা অতি নিকৃষ্ট!

সূরা আল আনআম

৬-৩২ : পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া - কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয় এবং যাহারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে তাহাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয় ; তোমরা কি অনুধাবন কর না ?

সূরা আল আনআম

৬-৩৩ : আমি অবশ্য জানি যে, তাহারা যাহা বলে তাহা তোমাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়; কিন্তু তাহারা তোমাকে তো মিথ্যাবাদী বলে না; বরং জালিমেরা আল্লাহ্‌র আয়াতকে অস্বীকার করে।

সূরা আল আনআম

৬-৩৪ : তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে অবশ্যই মিথ্যাবাদী বলা হইয়াছিল ; কিন্তু তাহাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও ক্লেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাহারা ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাহাদের নিকট আসিয়াছে। আল্লাহ্‌র আদেশ কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না, রাসূলগণের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট আসিয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-৩৫ : যদি তাহাদের উপেক্ষা তোমার নিকট কষ্টকর হয় তবে পারিলে ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ অথবা আকাশের সোপান অন্বেষণ কর এবং তাহাদের নিকট কোন নিদর্শন আন। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহাদের সকলকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করিতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।

সূরা আল আনআম

৬-৩৬ : যাহারা শ্রবণ করে শুধু তাহারাই ডাকে সাড়া দেয়। আর মৃতকে আল্লাহ্ পুনর্জীবিত করিবেন; অতঃপর তাঁহার দিকেই তাহারা প্রত্যানীত হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৩৭ : তাহারা বলে, ‘তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ বল, ‘নিদর্শন নাযিল করিতে আল্লাহ্ অবশ্যই সক্ষম,’ কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই জানে না।

সূরা আল আনআম

৬-৩৮ : ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল জীব এবং নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত পাখি - তাহারা সকলে তোমাদের মতই এক - একটি জাতি। কিতাবে কোন কিছুই আমি বাদ দেই নাই; অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাহাদেরকে একত্র করা হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৩৯ : যাহারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাহারা বধির ও মূক, অন্ধকারে রহিয়াছে। যাহাকে ইচ্ছা আল্লাহ্ বিপথগামী করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।

সূরা আল আনআম

৬-৪০ : বল, ‘তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্‌র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ?

সূরা আল আনআম

৬-৪১ : ‘না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে, তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।’

সূরা আল আনআম

৬-৪২ : তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ - ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়।

সূরা আল আনআম

৬-৪৩ : আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না ? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল।

সূরা আল আনআম

৬-৪৪ : তাহাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবশেষে তাহাদেরকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদেরকে ধরিলাম ; ফলে তখনি তাহারা নিরাশ হইল।

সূরা আল আনআম

৬-৪৫ : অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌রই - যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

সূরা আল আনআম

৬-৪৬ : বল, ‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ্ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কাড়িয়া নেন এবং তোমাদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন তবে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন্ ইলাহ্ আছে যে তোমাদেরকে এইগুলি ফিরাইয়া দিবে ?’ দেখ, আমি কিরূপে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি ; এতদসত্ত্বেও তাহারা মুখ ফিরাইয়া নেয়।

সূরা আল আনআম

৬-৪৭ : বল, ‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ্‌র শাস্তি অকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আপতিত হইলে জালিম সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেহ ধ্বংস হইবে কি ?’

সূরা আল আনআম

৬-৪৮ : আমি রাসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। কেহ ঈমান আনিলে ও নিজকে সংশোধন করিলে তাহার কোন ভয় নাই এবং সে দুঃখিতও হইবে না।

সূরা আল আনআম

৬-৪৯ : যাহারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৫০ : বল, ‘আমি তোমাদেরকে ইহা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহ্‌র ধনভাণ্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি অবগত নই; এবং তোমাদেরকে ইহাও বলি না যে, আমি ফিরিশ্‌তা; আমার প্রতি যাহা ওহী হয় আমি শুধু তাহারই অনুসরণ করি। বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান ?’ তোমরা কি অনুধাবন কর না ?

সূরা আল আনআম

৬-৫১ : তুমি ইহা দ্বারা তাহাদেরকে সতর্ক করিয়া দাও যাহারা ভয় করে যে, তাহাদেরকে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হইবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতীত তাহাদের কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকিবে না; হয়ত তাহারা সাবধান হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৫২ : যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁহার সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে তাহাদেরকে তুমি বিতাড়িত করিও না। তাহাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাহাদের নয় যে, তুমি তাহাদেরকে বিতাড়িত করিবে; করিলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৫৩ : আমি এইভাবে তাহাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করিয়াছি যেন তাহারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি ইহাদের প্রতিই আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিলেন ?’ আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন?

সূরা আল আনআম

৬-৫৪ : যাহারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে তাহারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাহাদেরকে তুমি বলিও : ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক’, তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তাঁহার কর্তব্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে কেহ অজ্ঞতাবশত যদি মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং সংশোধন করে তবে তো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল আনআম

৬-৫৫ : এইভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আর ইহাতে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।

সূরা আল আনআম

৬-৫৬ : বল, ‘তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদেরকে আহ্বান কর তাহাদের ‘ইবাদত করিতে আমাকে নিষেধ করা হইয়াছে। বল, ‘আমি তোমাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করি না; করিলে আমি বিপথগামী হইব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকিব না।’

সূরা আল আনআম

৬-৫৭ : বল, ‘অবশ্যই আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত ; অথচ তোমরা উহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছ। তোমরা যাহা সত্বর চাহিতেছ তাহা আমার নিকট নাই। কর্তৃত্ব তো আল্লাহ্‌রই; তিনি সত্য বিবৃত করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।’

সূরা আল আনআম

৬-৫৮ : বল, ‘তোমরা যাহা সত্বর চাহিতেছ তাহা যদি আমার নিকট থাকিত তবে আমার ও তোমাদের মধ্যকার ব্যাপারে তো ফয়সালাই হইয়া যাইত এবং আল্লাহ্ জালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’

সূরা আল আনআম

৬-৫৯ : অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁহারই নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেহ তাহা জানে না। জলে ও স্থলে যাহা কিছু আছে তাহা তিনিই অবগত, তাঁহার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নাই যাহা সুস্পষ্ট কিতাবে নাই।

সূরা আল আনআম

৬-৬০ : তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যাহা কর তাহা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদেরকে তিনি পুনর্জাগরিত করেন যাহাতে নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁহার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অনন্তর তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে তিনি অবহিত করিবেন।

সূরা আল আনআম

৬-৬১ : তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ত্রুটি করে না।

সূরা আল আনআম

৬-৬২ : অতঃপর তাহাদের প্রকৃত প্রতিপালক আল্লাহ্‌র দিকে তাহারা প্রত্যানীত হয়। দেখ, কর্তৃত্ব তো তাঁহারই এবং হিসাব গ্রহণে তিনিই সর্বাপেক্ষা তৎপর।

সূরা আল আনআম

৬-৬৩ : বল, ‘কে তোমাদেরকে ত্রাণ করে স্থলভাগের ও সমুদ্রের অন্ধকার হইতে যখন তোমরা কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁহার নিকট অনুনয় কর ?’ আমাদেরকে ইহা হইতে ত্রাণ করিলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হইব।’

সূরা আল আনআম

৬-৬৪ : বল, ‘আল্লাহ্‌ই তোমাদেরকে উহা হইতে এবং সমস্ত দুঃখকষ্ট হইতে পরিত্রাণ করেন। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাঁহার শরীক কর।’

সূরা আল আনআম

৬-৬৫ : বল, ‘তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হইতে শাস্তি প্রেরণ করিতে, অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করিতে অথবা এক দলকে অপর দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহণ করাইতে তিনিই সক্ষম।’ দেখ, আমি কিরূপে বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি যাহাতে তাহারা অনুধাবন করে।

সূরা আল আনআম

৬-৬৬ : তোমার সম্প্রদায় তো উহাকে মিথ্যা বলিয়াছে অথচ উহা সত্য। বল, ‘আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নই।’

সূরা আল আনআম

৬-৬৭ : প্রত্যেক বার্তার জন্য নির্ধারিত কাল রহিয়াছে এবং শীঘ্রই তোমরা অবহিত হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-৬৮ : তুমি যখন দেখ, তাহারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাহাদের হইতে সরিয়া পড়িবে, যে পর্যন্ত না তাহারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে তবে স্মরণ হওয়ার পরে জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসিবে না।

সূরা আল আনআম

৬-৬৯ : উহাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাহাদের নয় যাহারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে। তবে উপদেশ দেওয়া তাহাদের কর্তব্য যাহাতে উহারাও তাক্ওয়া অবলম্বন করে।

সূরা আল আনআম

৬-৭০ : যাহারা তাহাদের দীনকে ক্রীড়া - কৌতুকরূপে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাহাদেরকে প্রতারিত করে তুমি তাহাদের সঙ্গ বর্জন কর এবং ইহা দ্বারা তাহাদেরকে উপদেশ দাও, যাহাতে কেহ নিজ কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লাহ্ ব্যতীত তাহার কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকিবে না এবং বিনিময়ে সব কিছু দিলেও তাহা গৃহীত হইবে না। ইহারাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হইবে ; কুফরীহেতু ইহাদের জন্য রহিয়াছে অত্যুষ্ণ পানীয় ও মর্মন্তুদ শাস্তি।

সূরা আল আনআম

৬-৭১ : বল, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত আমরা কি এমন কিছুকে ডাকিব যাহা আমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করিতে পারে না ? ‘আল্লাহ্ আমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি সেই ব্যক্তির ন্যায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইব যাহাকে শয়তান দুনিয়ায় পথ ভুলাইয়া হয়রান করিয়াছে, যদিও তাহার সহচরগণ তাহাকে ঠিক পথে আহ্বান করিয়া বলে, ‘আমাদের নিকট আস ?’ বল, ‘আল্লাহ্‌র পথই তো পথ এবং আমরা আদিষ্ট হইয়াছি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করিতে,

সূরা আল আনআম

৬-৭২ : ‘এবং সালাত কায়েম করিতে ও তাঁহাকে ভয় করিতে; এবং তাঁহারই নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হইবে।'

সূরা আল আনআম

৬-৭৩ : তিনিই যথাবিধি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন। যখন তিনি বলেন, ‘হও’ তখনই হইয়া যায়। তাঁহার কথাই সত্য। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁহারই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময় সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল আনআম

৬-৭৪ : স্মরণ কর, ইব্‌রাহীম তাহার পিতা আযরকে বলিয়াছিল, ‘আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ্‌রূপে গ্রহণ করেন ? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখিতেছি।’

সূরা আল আনআম

৬-৭৫ : এইভাবে আমি ইব্‌রাহীমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালন - ব্যবস্থা দেখাই, যাহাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।

সূরা আল আনআম

৬-৭৬ : অতঃপর রাত্রির অন্ধকার যখন তাহাকে আচ্ছন্ন করিল তখন সে নক্ষত্র দেখিয়া বলিল, ‘ইহাই আমার প্রতিপালক।’ অতঃপর যখন উহা অস্তমিত হইল তখন সে বলিল, ‘যাহা অস্তমিত হয় তাহা আমি পসন্দ করি না।’

সূরা আল আনআম

৬-৭৭ : অতঃপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হইতে দেখিল তখন বলিল, ‘ইহা আমার প্রতিপালক।’ যখন ইহাও অস্তমিত হইল তখন বলিল, ‘আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করিলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হইব।’

সূরা আল আনআম

৬-৭৮ : অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হইতে দেখিল তখন বলিল, ‘ইহা আমার প্রতিপালক, ইহা সর্ববৃহৎ। যখন ইহাও অস্তমিত হইল, তখন সে বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাহাকে আল্লাহ্‌র শরীক কর তাহার সঙ্গে আমার কোন সংশ্রব নাই।

সূরা আল আনআম

৬-৭৯ : ‘আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইতেছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’

সূরা আল আনআম

৬-৮০ : তাহার সম্প্রদায় তাহার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইল। সে বলিল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে আমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইবে ? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। আমার প্রতিপালক অন্যবিধ ইচ্ছা না করিলে তোমরা যাহাকে তাঁহার শরীক কর তাহাকে আমি ভয় করি না, সব কিছুই আমার প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত, তবে কি তোমরা অনুধাবন করিবে না ?

সূরা আল আনআম

৬-৮১ : ‘তোমরা যাহাকে আল্লাহ্‌র শরীক কর আমি তাহাকে কিরূপে ভয় করিব ? অথচ তোমরা আল্লাহ্‌র শরীক করিতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোন সনদ দেন নাই। সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল, দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশি হক্‌দার।’

সূরা আল আনআম

৬-৮২ : যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং তাহাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করে নাই, নিরাপত্তা তাহাদেরই জন্য এবং তাহারাই সৎপথপ্রাপ্ত।

সূরা আল আনআম

৬-৮৩ : আর ইহা আমার যুক্তি - প্রমাণ যাহা ইব্‌রাহীমকে দিয়াছিলাম তাহার সম্প্রদায়ের মুকাবিলায়; আমি যাহাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল আনআম

৬-৮৪ : আর আমি তাহাকে দান করিয়াছিলাম ইসহাক ও ইয়া‘কূব, ইহাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম; পূর্বে সূরা নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম এবং তাহার বংশধর দাঊদ, সুলায়মান ও আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও; আর এইভাবেই সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি;

সূরা আল আনআম

৬-৮৫ : এবং যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ‘ঈসা এবং ইল্‌য়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত;

সূরা আল আনআম

৬-৮৬ : আরও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম ইস্‌মাঈল, আল্ - য়াসা‘আ, ইয়ূনুস্ ও লূতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেককে -

সূরা আল আনআম

৬-৮৭ : এবং ইহাদের পিতৃপুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে। আমি তাহাদেরকে মনোনীত করিয়াছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করিয়াছিলাম।

সূরা আল আনআম

৬-৮৮ : ইহা আল্লাহ্‌র হিদায়াত; স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি ইহা দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তাহারা যদি শির্‌ক করিত তবে তাহাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হইতই।

সূরা আল আনআম

৬-৮৯ : আমি উহাদেরকেই কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবূওয়াত দান করিয়াছি, অতঃপর যদি ইহারা এইগুলিকে প্রত্যাখ্যানও করে তবে আমি তো এমন এক সম্প্রদায়ের প্রতি এইগুলির ভার অর্পণ করিয়াছি যাহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যান করিবে না।

সূরা আল আনআম

৬-৯০ : উহাদেরকেই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন, সুতরাং তুমি তাহাদের পথের অনুসরণ কর। বল, ‘ইহার জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না, ইহা তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।’

সূরা আল আনআম

৬-৯১ : তাহারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করে নাই যখন তাহারা বলে, ‘আল্লাহ্ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেন নাই।’ বল, ‘কে নাযিল করিয়াছেন মূসার আনীত কিতাব যাহা মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ ছিল, তাহা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করিয়া কিছু প্রকাশ কর ও যাহার অনেকাংশ গোপন রাখ এবং যাহা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ ও তোমরা জানিতে না তাহাও শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল? বল, ‘আল্লাহ্ই’ ; অতঃপর তাহাদেরকে তাহাদের নিরর্থক আলোচনারূপ খেলায় মগ্ন হইতে দাও।

সূরা আল আনআম

৬-৯২ : আমি এই কল্যাণময় কিতাব নাযিল করিয়াছি যাহা উহার পূর্বেকার কিতাবের প্রত্যায়নকারী এবং যাহা দ্বারা তুমি মক্কা ও উহার চতুষ্পার্শ্বের লোকদেরকে সতর্ক কর। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে তাহারা উহাতে বিশ্বাস করে এবং তাহারা তাহাদের সালাতের হিফাযত করে।

সূরা আল আনআম

৬-৯৩ : তাহার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, ‘আমার নিকট ওহী হয়,’ যদিও তাহার প্রতি নাযিল হয় না এবং যে বলে, ‘আল্লাহ্ যাহা নাযিল করিয়াছেন আমিও উহার অনুরূপ নাযিল করিব ?’ যদি তুমি দেখিতে পাইতে যখন জালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণায় রহিবে এবং ফিরিশ্‌তাগণ হাত বাড়াইয়া বলিবে, ‘তোমাদের প্রাণ বাহির কর! তোমরা আল্লাহ্ সম্বন্ধে অন্যায় বলিতে ও তাঁহার বিধান সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিতে, সেজন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হইবে।’

সূরা আল আনআম

৬-৯৪ : তোমরা তো আমার নিকট নিঃসংগ অবস্থায় আসিয়াছ, যেমন আমি প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছিলাম; তোমাদেরকে যাহা দিয়াছিলাম তাহা তোমরা পশ্চাতে ফেলিয়া আসিয়াছ, তোমরা যাহাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করিতে। তোমাদের সেই সুপারিশকারিগণকেও তোমাদের সঙ্গে দেখিতেছি না; তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হইয়াছে এবং তোমরা যাহা ধারণা করিয়াছিলে তাহাও নিষ্ফল হইয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-৯৫ : আল্লাহ্ই শস্য - বীজ ও আঁটি অংকুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হইতে জীবন্তকে বাহির করেন এবং জীবন্ত হইতে প্রাণহীনকে বাহির করেন। তিনিই তো আল্লাহ্; সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরিয়া যাইবে?

সূরা আল আনআম

৬-৯৬ : তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত্রি এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করিয়াছেন; এ সবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ।

সূরা আল আনআম

৬-৯৭ : তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করিয়াছেন যেন তদ্দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি।

সূরা আল আনআম

৬-৯৮ : তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান রহিয়াছে। অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি।

সূরা আল আনআম

৬-৯৯ : তিনিই আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর উহা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্‌গম করি; অনন্তর উহা হইতে সবুজ পাতা উদ্‌গত করি, পরে উহা হইতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি, এবং খেজুরবৃক্ষের মাথি হইতে ঝুলন্ত কাঁদি বাহির করি আর আংগুরের উদ্যান সৃষ্টি করি এবং যায়তূন ও দাড়িম্বও। ইহারা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও। লক্ষ্য কর উহার ফলের প্রতি, যখন উহা ফলবান হয় এবং উহার পরিপক্বতা প্রাপ্তির প্রতি। মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য উহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-১০০ : তাহারা আল জিনকে আল্লাহ্‌র শরীক করে, অথচ তিনিই ইহাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং উহারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্‌র প্রতি পুত্র - কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র - মহিমান্বিত ! এবং উহারা যাহা বলে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে।

সূরা আল আনআম

৬-১০১ : তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁহার সন্তান হইবে কিরূপে? তাঁহার তো কোন স্ত্রী নাই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল আনআম

৬-১০২ : তিনিই তো আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁহার ‘ইবাদত কর; তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।

সূরা আল আনআম

৬-১০৩ : দৃষ্টি তাঁহাকে অবধারণ করিতে পারে না; কিন্তু তিনি অবধারণ করেন সকল দৃষ্টি এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।

সূরা আল আনআম

৬-১০৪ : তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই আসিয়াছে। সুতরাং কেহ উহা দেখিলে উহা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হইবে; আর কেহ না দেখিলে তাহাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক নই।

সূরা আল আনআম

৬-১০৫ : আমি এইভাবে নিদর্শনাবলী বিভিন্ন প্রকারে বিবৃত করি। ফলে, উহারা বলে, ‘তুমি পড়িয়া লইয়াছ ?’ কিন্তু আমি তো সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।

সূরা আল আনআম

৬-১০৬ : তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা ওহী হয় তুমি তাহারই অনুসরণ কর, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই এবং মুশরিকদের হইতে মুখ ফিরাইয়া লও।

সূরা আল আনআম

৬-১০৭ : আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে তাহারা শির্‌ক করিত না এবং তোমাকে তাহাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করি নাই; আর তুমি তাহাদের অভিভাবকও নও।

সূরা আল আনআম

৬-১০৮ : আল্লাহ্‌কে ছাড়িয়া যাহাদেরকে তাহারা ডাকে তাহাদেরকে তোমরা গালি দিও না। কেননা তাহারা সীমালংঘন করিয়া অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ্‌কেও গালি দিবে। এইভাবে আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাহাদের কার্যকলাপ সুশোভন করিয়াছি; অতঃপর তাহাদের প্রতিপালকের নিকট তাহাদের প্রত্যাবর্তন। অনন্তর তিনি তাহাদেরকে তাহাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করিবেন।

সূরা আল আনআম

৬-১০৯ : তাহারা আল্লাহ্‌র নামে কঠিন শপথ করিয়া বলে, তাহাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসিত তবে অবশ্যই তাহারা ইহাতে ঈমান আনিত। বল, ‘নিদর্শন তো আল্লাহ্‌র ইখ্‌তিয়ারভুক্ত।’ তাহাদের নিকট নিদর্শন আসিলেও তাহারা যে ঈমান আনিবে না ইহা কিভাবে তোমাদের বোধগম্য করান যাইবে?

সূরা আল আনআম

৬-১১০ : তাহারা যেমন প্রথমবার উহাতে ঈমান আনে নাই তেমনি আমিও তাহাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করিয়া দিব এবং তাহাদেরকে তাহাদের অবাধ্যতায় উদ্‌ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দিব।

সূরা আল আনআম

৬-১১১ : আমি তাহাদের নিকট ফিরিশ্‌তা প্রেরণ করিলেও এবং মৃতেরা তাহাদের সঙ্গে কথা বলিলেও এবং সকল বস্তুকে তাহাদের সম্মুখে হাযির করিলেও যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে তাহারা ঈমান আনিবে না; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।

সূরা আল আনআম

৬-১১২ : এইরূপে আমি মানব ও আল জিনের মধ্যে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করিয়াছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাহাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিতেন তবে তাহারা ইহা করিত না; সুতরাং তুমি তাহাদেরকে ও তাহাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন কর।

সূরা আল আনআম

৬-১১৩ : আর তাহারা এই উদ্দেশ্যে প্ররোচিত করে যে, যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহাদের মন যেন উহার প্রতি অনুরাগী হয় এবং উহাতে যেন তাহারা পরিতুষ্ট হয় আর তাহারা যে অপকর্ম করে তাহাই যেন তাহারা করিতে থাকে।

সূরা আল আনআম

৬-১১৪ : বল, ‘তবে কি আমি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে সালিস মানিব - যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন!’ আমি যাহাদেরকে কিতাব দিয়াছি তাহারা জানে যে, উহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে সত্যসহ অবতীর্ণ হইয়াছে। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।

সূরা আল আনআম

৬-১১৫ : সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়া তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁহার বাক্য পরিবর্তন করিবার কেহ নাই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল আনআম

৬-১১৬ : যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্‌র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।

সূরা আল আনআম

৬-১১৭ : তাঁহার পথ ছাড়িয়া কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক তো সবিশেষ অবহিত এবং সৎপথে যাহারা আছে তাহাও তিনি সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল আনআম

৬-১১৮ : তোমরা তাঁহার বিধানে বিশ্বাসী হইলে যাহাতে আল্লাহ্‌র নাম নেওয়া হইয়াছে তাহা হইতে আহার কর;

সূরা আল আনআম

৬-১১৯ : তোমাদের কী হইয়াছে যে, যাহাতে আল্লাহ্‌র নাম নেওয়া হইয়াছে তোমরা তাহা হইতে আহার করিবে না ? যাহা তোমাদের জন্য তিনি হারাম করিয়াছেন তাহা তিনি বিশদভাবেই তোমাদের নিকট বিবৃত করিয়াছেন, তবে তোমরা নিরুপায় হইলে তাহা স্বতন্ত্র। অনেকে অজ্ঞানতাবশত নিজেদের খেয়াল - খুশি দ্বারা অবশ্যই অন্যকে বিপথগামী করে; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল আনআম

৬-১২০ : তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন কর ; যাহারা পাপ করে তাহাদেরকে অচিরেই তাহাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-১২১ : যাহাতে আল্লাহ্‌র নাম নেওয়া হয় নাই তাহার কিছুই তোমরা আহার করিও না; উহা অবশ্যই পাপ। নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাহাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করিতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাহাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হইবে।

সূরা আল আনআম

৬-১২২ : যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাহাকে আমি পরে জীবিত করিয়াছি এবং যাহাকে মানুষের মধ্যে চলিবার জন্য আলোক দিয়াছি সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্ধকারে রহিয়াছে এবং সেই স্থান হইতে বাহির হইবার নয় ? এইরূপে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাহাদের কৃতকর্ম শোভন করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

সূরা আল আনআম

৬-১২৩ : এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি ; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে; অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।

সূরা আল আনআম

৬-১২৪ : যখন তাহাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে তাহারা তখন বলে, ‘আল্লাহ্‌র রাসূলগণকে যাহা দেওয়া হইয়াছিল আমাদেরকেও তাহা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনও বিশ্বাস করিব না।’ আল্লাহ্ তাঁহার রিসালাতের দায়িত্ব কাহার উপর অর্পণ করিবেন তাহা তিনিই ভাল জানেন। যাহারা অপরাধ করিয়াছে, চক্রান্তের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট হইতে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইবেই।

সূরা আল আনআম

৬-১২৫ : আল্লাহ্ কাহাকেও সৎপথে পরিচালিত করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করিয়া দেন এবং কাহাকেও বিপথগামী করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ অতিশয় সংকীর্ণ করিয়া দেন ; তাহার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতই দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। যাহারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে এইভাবে লাঞ্ছিত করেন।

সূরা আল আনআম

৬-১২৬ : ইহাই তোমার প্রতিপালক - নির্দেশিত সরল পথ। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি তাহাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি।

সূরা আল আনআম

৬-১২৭ : তাহাদের প্রতিপালকের নিকট তাহাদের জন্য রহিয়াছে শান্তির আবাস এবং তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য তিনিই তাহাদের অভি - ভাবক।

সূরা আল আনআম

৬-১২৮ : যেদিন তিনি তাহাদের সকলকে একত্র করিবেন এবং বলিবেন, ‘হে আল জিন সম্প্রদায়! তোমরা তো অনেক লোককে তোমাদের অনুগামী করিয়াছিলে’ এবং মানব সমাজের মধ্যে তাহাদের বন্ধুগণ বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যে কতক অপরের দ্বারা লাভবান হইয়াছে এবং তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারণ করিয়াছিলে এখন আমরা উহাতে উপনীত হইয়াছি।’ সেদিন আল্লাহ্ বলিবেন, ‘জাহান্নামই তোমাদের বাসস্থান, তোমরা সেখানে স্থায়ী হইবে,’ যদি না আল্লাহ্ অন্য রকম ইচ্ছা করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল আনআম

৬-১২৯ : এইভাবে উহাদের কৃতকর্মের জন্য আমি জালিমদের একদলকে অন্যদলের বন্ধু করিয়া থাকি।

সূরা আল আনআম

৬-১৩০ : আমি উহাদেরকে বলিব, ‘হে আল জিন ও মানব সম্প্রদায় ! তোমাদের মধ্য হইতে কি রাসূলগণ তোমাদের নিকট আসে নাই - যাহারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট বিবৃত করিত এবং তোমাদেরকে এই দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করিত ?’ উহারা বলিবে, ‘আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’ বস্তুত পার্থিব জীবন উহাদেরকে প্রতারিত করিয়াছিল, আর উহারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্যও দিবে যে, তাহারা কাফির ছিল।

সূরা আল আনআম

৬-১৩১ : ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবহিত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়।

সূরা আল আনআম

৬-১৩২ : প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহার স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।

সূরা আল আনআম

৬-১৩৩ : তোমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, দয়াশীল। তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদেরকে অপসারিত করিতে এবং তোমাদের পরে যাহাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করিতে পারেন - যেমন তোমাদেরকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন।

সূরা আল আনআম

৬-১৩৪ : তোমাদের সঙ্গে যাহা ওয়াদা করা হইতেছে উহা বাস্তবায়িত হইবেই, তোমরা তাহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না।

সূরা আল আনআম

৬-১৩৫ : বল, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা যেখানে যাহা করিতেছ, করিতে থাক ; আমিও আমার কাজ করিতেছি। তোমরা শীঘ্রই জানিতে পারিবে, কাহার পরিণাম মঙ্গলময়। জালিমগণ কখনও সফলকাম হইবে না।’

সূরা আল আনআম

৬-১৩৬ : আল্লাহ্ যে শস্য ও গবাদিপশু সৃষ্টি করিয়াছেন তন্মধ্য হইতে তাহারা আল্লাহ্‌র জন্য এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘ইহা আল্লাহ্‌র জন্য এবং ইহা আমাদের দেবতাদের জন্য।’ যাহা তাহাদের দেবতাদের অংশ তাহা আল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছায় না এবং যাহা আল্লাহ্‌র অংশ তাহা তাহাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়, তাহারা যাহা মীমাংসা করে তাহা নিকৃষ্ট!

সূরা আল আনআম

৬-১৩৭ : এইভাবে তাহাদের দেবতারা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাহাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করিয়াছে তাহাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাহাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাহাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করিলে তাহারা ইহা করিত না। সুতরাং তাহাদেরকে তাহাদের মিথ্যা লইয়া থাকিতে দাও।

সূরা আল আনআম

৬-১৩৮ : তাহারা তাহাদের ধারণা অনুসারে বলে, ‘এইসব গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত্র নিষিদ্ধ ; আমরা যাহাকে ইচ্ছা করি সে ব্যতীত কেহ এইসব আহার করিতে পারিবে না’, এবং কতক গবাদিপশুর পৃষ্ঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হইয়াছে এবং কতক পশু যবেহ্ করিবার সময় তাহারা আল্লাহ্‌র নাম নেয় না। এই সমস্তই তাহারা আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনার উদ্দেশ্যে বলে ; তাহাদের এই মিথ্যা রচনার প্রতিফল তিনি অবশ্যই তাহাদেরকে দিবেন।

সূরা আল আনআম

৬-১৩৯ : তাহারা আরও বলে, ‘এইসব গবাদিপশুর গর্ভে যাহা আছে তাহা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং ইহা আমাদের স্ত্রীদের জন্য অবৈধ; আর উহা যদি মৃত হয় তবে সকলেই ইহাতে অংশীদার।’ তিনি তাহাদের এইরূপ বলিবার প্রতিফল অচিরেই তাহাদেরকে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল আনআম

৬-১৪০ : যাহারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞানতাবশত নিজেদের সন্তানদের হত্যা করে এবং আল্লাহ্ - প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করিবার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে তাহারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। তাহারা অবশ্যই বিপথগামী হইয়াছে এবং তাহারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না।

সূরা আল আনআম

৬-১৪১ : তিনিই লতা ও বৃক্ষ - উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ - বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তূন ও দাড়িম্বও সৃষ্টি করিয়াছেন - এইগুলি একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও। যখন উহা ফলবান হয় তখন উহার ফল আহার করিবে আর ফসল তুলিবার দিনে উহার হক প্রদান করিবে এবং অপচয় করিবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পসন্দ করেন না।

সূরা আল আনআম

৬-১৪২ : গবাদিপশুর মধ্যে কতক ভারবাহী ও কতক ক্ষুদ্রাকার পশু সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহ্ যাহা রিযিকরূপে তোমাদেরকে দিয়াছেন তাহা হইতে আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না; সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

সূরা আল আনআম

৬-১৪৩ : নর ও মাদী আটটি : মেষের দুইটি ও ছাগলের দুইটি; বল, ‘নর দুইটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করিয়াছেন কিংবা মাদী দুইটিই অথবা মাদী দুইটির গর্ভে যাহা আছে তাহা ? তোমরা সত্যবাদী হইলে প্রমাণসহ আমাকে অবহিত কর;’

সূরা আল আনআম

৬-১৪৪ : এবং উটের দুইটি ও গরুর দুইটি। বল, ‘নর দুইটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করিয়াছেন কিংবা মাদী দুইটিই অথবা মাদী দুইটির গর্ভে যাহা আছে তাহা ? এবং আল্লাহ্ যখন তোমাদেরকে এইসব নির্দেশ দান করেন তখন কি তোমরা উপস্থিত ছিলে ?’ সুতরাং যে ব্যক্তি অজ্ঞানতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে তাহার চেয়ে অধিক জালিম আর কে ? আল্লাহ্ তো জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

সূরা আল আনআম

৬-১৪৫ : বল, ‘আমার প্রতি যে ওহী হইয়াছে তাহাতে, লোকে যাহা আহার করে তাহার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাই না - মৃত, বহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ব্যতীত। কেননা এইগুলি অবশ্যই অপবিত্র অথবা যাহা অবৈধ, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গের কারণে।’ তবে কেহ অবাধ্য না হইয়া এবং সীমালংঘন না করিয়া নিরুপায় হইয়া উহা আহার করিলে তোমার প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল আনআম

৬-১৪৬ : আমি ইয়াহূদীদের জন্য নখরযুক্ত সমস্ত পশু হারাম করিয়াছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাহাদের জন্য হারাম করিয়াছিলাম; তবে এইগুলির পিঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ব্যতীত, তাহাদের অবাধ্যতার দরুন তাহাদেরকে এই প্রতিফল দিয়াছিলাম। নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী।

সূরা আল আনআম

৬-১৪৭ : অতঃপর যদি তাহারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে বল, ‘তোমাদের প্রতিপালক সর্বব্যাপী দয়ার মালিক এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হইতে তাঁহার শাস্তি রদ করা হয় না।’

সূরা আল আনআম

৬-১৪৮ : যাহারা শির্‌ক করিয়াছে তাহারা বলিবে, ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্‌ক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।’ এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল, বল, ‘তোমাদের নিকট কোন যুক্তি আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।’

সূরা আল আনআম

৬-১৪৯ : বল, ‘চূড়ান্ত প্রমাণ তো আল্লাহ্‌রই ; তিনি যদি ইচ্ছা করিতেন তবে তোমাদের সকলকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করিতেন।’

সূরা আল আনআম

৬-১৫০ : বল, ‘আল্লাহ্ যে ইহা নিষিদ্ধ করিয়াছেন এ সম্বন্ধে যাহারা সাক্ষ্য দিবে তাহাদেরকে হাযির কর।’ তাহারা সাক্ষ্য দিলেও তুমি তাহাদের সঙ্গে ইহা স্বীকার করিও না। যাহারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে, যাহারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং তাহাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়, তুমি তাহাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করিও না।

সূরা আল আনআম

৬-১৫১ : বল, ‘আস, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যাহা হারাম করিয়াছেন তোমাদেরকে তাহা পড়িয়া শুনাই। উহা এই : ‘তোমরা তাঁহার কোন শরীক করিবে না, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করিবে না, আমিই তোমাদের ও তাহাদেরকে রিযিক দিয়া থাকি। প্রকাশ্যে হউক কিংবা গোপনে হউক, অশ্লীল কাজের নিকটেও যাইবে না। আল্লাহ্ যাহার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাহাকে হত্যা করিবে না।’ তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর।

সূরা আল আনআম

৬-১৫২ : ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তাহার সম্পত্তির নিকটবর্তী হইবে না এবং পরিমাণ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরাপুরি দিবে। আমি কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলিবে তখন ন্যায্য বলিবে - স্বজনের সম্পর্কে হইলেও এবং আল্লাহ্‌কে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।

সূরা আল আনআম

৬-১৫৩ : এবং এই পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা ইহারই অনুসরণ করিবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করিবে না, করিলে উহা তোমাদেরকে তাঁহার পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবে। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও।

সূরা আল আনআম

৬-১৫৪ : অতঃপর আমি মূসাকে দিয়াছিলাম কিতাব যাহা সৎকর্মপরায়ণের জন্য পূর্ণাঙ্গ, যাহা সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, পথনির্দেশ এবং দয়াস্বরূপ - যাহাতে তাহারা তাহাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে বিশ্বাস করে।

সূরা আল আনআম

৬-১৫৫ : এই কিতাব আমি নাযিল করিয়াছি যাহা কল্যাণময়। সুতরাং উহার অনুসরণ কর এবং সাবধান হও, তাহা হইলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হইবে;

সূরা আল আনআম

৬-১৫৬ : পাছে তোমরা বল, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হইয়াছিল ; আমরা তাহাদের পঠন - পাঠন সম্বন্ধে তো গাফিল ছিলাম;’

সূরা আল আনআম

৬-১৫৭ : কিংবা তোমরা বল, ‘যদি কিতাব আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইত তবে আমরা তো তাহাদের অপেক্ষা অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত হইতাম।’ এখন তো তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত আসিয়াছে। অতঃপর যে কেহ আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করিবে এবং উহা হইতে মুখ ফিরাইয়া নিবে তাহার চেয়ে বড় জালিম আর কে ? যাহারা আমার নিদর্শনসমূহ হইতে মুখ ফিরাইয়া নেয় সত্যবিমুখিতার জন্য, আমি তাহাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিব।

সূরা আল আনআম

৬-১৫৮ : তাহারা শুধু ইহারই না প্রতীক্ষা করে, তাহাদের নিকট ফিরিশতা আসিবে, কিংবা তোমার প্রতিপালক আসিবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসিবে ? যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসিবে সেদিন তাহার ঈমান কাজে আসিবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনে নাই কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই। বল, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষায় রহিলাম।’

সূরা আল আনআম

৬-১৫৯ : যাহারা দীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করিয়াছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে তাহাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাহাদের বিষয় আল্লাহ্‌র ইখ্‌তিয়ারভুক্ত। আল্লাহ্ তাহাদেরকে তাহাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করিবেন।

সূরা আল আনআম

৬-১৬০ : কেহ কোন সৎকাজ করিলে সে তাহার দশগুণ পাইবে এবং কেহ কোন অসৎ কাজ করিলে তাহাকে শুধু উহারই প্রতিফল দেওয়া হইবে, আর তাহাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না।

সূরা আল আনআম

৬-১৬১ : বল, ‘আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। উহাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন, ইব্‌রাহীমের ধর্মাদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’

সূরা আল আনআম

৬-১৬২ : বল, ‘আমার সালাত, আমার ‘ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্‌রই উদ্দেশ্যে।

সূরা আল আনআম

৬-১৬৩ : ‘তাঁহার কোন শরীক নাই এবং আমি ইহারই জন্য আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।

সূরা আল আনআম

৬-১৬৪ : বল, ‘আমি কি আল্লাহ্‌কে ছাড়িয়া অন্য প্রতিপালককে খুঁজিব ? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক।’ প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেহ অন্য কাহারও ভার গ্রহণ করিবে না। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তোমাদের প্রতিপালকের নিকটেই, তৎপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতে তাহা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করিবেন।

সূরা আল আনআম

৬-১৬৫ : তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করিয়াছেন এবং যাহা তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছেন। তোমার প্রতি - পালক তো শাস্তি প্রদানে দ্রুত আর তিনি অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়াময়।