দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন১৯-১ : কাফ্ - হা - ইয়া - আইন - সোয়াদ ;
১৯-২ : ইহা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁহার বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি,
১৯-৩ : যখন সে তাহার প্রতিপালককে আহ্বান করিয়াছিল নিভৃতে,
১৯-৪ : সে বলিয়াছিল, ‘হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হইয়াছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হইয়াছে; হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে আহ্বান করিয়া আমি কখনও ব্যর্থকাম হই নাই।
১৯-৫ : ‘আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হইতে আমাকে দান কর উত্তরাধিকারী,
১৯-৬ : ‘যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করিবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব করিবে ইয়া‘কূবের বংশের এবং হে আমার প্রতিপালক! তাহাকে করিও সন্তোষভাজন’।
১৯-৭ : তিনি বলিলেন, ‘ হে যাকারিয়্যা! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিতেছি, তাহার নাম হইবে ইয়াহ্ইয়া; এই নামে পূর্বে আমি কাহারও নামকরণ করি নাই।’
১৯-৮ : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেমন করিয়া আমার পুত্র হইবে যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা ও আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত।’
১৯-৯ : তিনি বলিলেন, ‘এইরূপই হইবে।’ তোমার প্রতিপালক বলিলেন, ‘ইহা আমার জন্য সহজসাধ্য ; আমি তো পূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না।’
১৯-১০ : যাকারিয়্যা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নিদর্শন দাও।’ তিনি বলিলেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কাহারও সঙ্গে তিন দিন বাক্যালাপ করিবে না।’
১৯-১১ : অতঃপর সে কক্ষ হইতে বাহির হইয়া তাহার সম্প্রদায়ের নিকট আসিল এবং ইঙ্গিতে তাহাদেরকে সকাল সন্ধায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করিতে বলিল।
১৯-১২ : ‘হে ইয়াহ্ইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ কর।’ আমি তাহাকে শৈশবেই দান করিয়াছিলাম জ্ঞান,
১৯-১৩ : এবং আমার নিকট হইতে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা; সে ছিল মুত্তাকী,
১৯-১৪ : পিতা - মাতার অনুগত এবং সে ছিল না উদ্ধত ও অবাধ্য।
১৯-১৫ : তাহার প্রতি শান্তি যেদিন সে জন্মলাভ করে, যেদিন তাহার মৃত্যু হইবে এবং যেদিন সে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হইবে।
১৯-১৬ : বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত মার্ইয়ামের কথা, যখন সে তাহার পরিবারবর্গ হইতে পৃথক হইয়া নিরালায় পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় লইল,
১৯-১৭ : অতঃপর উহাদের হইতে সে পর্দা করিল। অতঃপর আমি তাহার নিকট আমার রূহ্কে পাঠাইলাম, সে তাহার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করিল।
১৯-১৮ : মার্ইয়াম বলিল, আল্লাহ্কে ভয় কর যদি তুমি ‘মুত্তাকী হও’, আমি তোমা হইতে দয়াময়ের শরণ লইতেছি।
১৯-১৯ : সে বলিল, ‘আমি তো তোমার প্রতিপালক - প্রেরিত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করিবার জন্য।’
১৯-২০ : মার্ইয়াম বলিল, ‘কেমন করিয়া আমার পুত্র হইবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করে নাই এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই?’
১৯-২১ : সে বলিল, ‘এইরূপই হইবে।’ তোমার প্রতিপালক বলিয়াছেন, ‘ইহা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমি উহাকে এইজন্য সৃষ্টি করিব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার নিকট হইতে এক অনুগ্রহ; ইহা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’
১৯-২২ : তৎপর সে গর্ভে উহাকে ধারণ করিল; অতঃপর তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলিয়া গেল;
১৯-২৩ : প্রসব - বেদনা তাহাকে এক খর্জুর - বৃক্ষতলে আশ্রয় লইতে বাধ্য করিল। সে বলিল, ‘হায়, ইহার পূর্বে আমি যদি মরিয়া যাইতাম ও লোকের স্মৃতি হইতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হইতাম!’
১৯-২৪ : ফিরিশ্তা তাহার নিম্নপার্শ্ব হইতে আহ্বান করিয়া তাহাকে বলিল, ‘তুমি দুঃখ করিও না, তোমার পাদদেশে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করিয়াছেন;
১৯-২৫ : ‘তুমি তোমার দিকে খর্জুর - বৃক্ষের কাণ্ডে নাড়া দাও, উহা তোমাকে সুপক্ব তাজা খর্জুর দান করিবে।
১৯-২৬ : সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়াও। মানুষের মধ্যে কাহাকেও যদি তুমি দেখ তখন বলিও, ‘আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মানত করিয়াছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করিব না।’
১৯-২৭ : অতঃপর সে সন্তানকে লইয়া তাহার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হইল; উহারা বলিল, ‘হে মার্ইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করিয়া বসিয়াছ।
১৯-২৮ : ‘হে হারূন - ভগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিণী।’
১৯-২৯ : অতঃপর মার্ইয়াম সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করিল। উহারা বলিল, ‘যে কোলের শিশু তাহার সঙ্গে আমরা কেমন করিয়া কথা বলিব?’
১৯-৩০ : সে বলিল, ‘আমি তো আল্লাহ্র বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়াছেন, আমাকে নবী করিয়াছেন,
১৯-৩১ : ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করিয়াছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও যাকাত আদায় করিতে -
১৯-৩২ : ‘আর আমাকে আমার মাতার প্রতি অনুগত করিয়াছেন এবং তিনি আমাকে করেন নাই উদ্ধত ও হতভাগ্য;
১৯-৩৩ : ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মলাভ করিয়াছি, যেদিন আমার মৃত্যু হইবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হইব।’
১৯-৩৪ : এই - ই মার্ইয়াম - তনয় ‘ঈসা। আমি বলিলাম সত্য কথা, যে বিষয়ে উহারা বিতর্ক করে।
১৯-৩৫ : সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহ্র কাজ নহে, তিনি পবিত্র মহিমময়। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন সেই সম্পর্কে বলেন ‘হও’ এবং উহা হইয়া যায়।
১৯-৩৬ : আল্লাহ্ই আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক ; সুতরাং তোমরা তাঁহার ‘ইবাদত কর, ইহাই সরল পথ।
১৯-৩৭ : অতঃপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করিল, সুতরাং দুর্ভোগ কাফিরদের জন্য মহাদিবস আগমনকালে।
১৯-৩৮ : উহারা যেদিন আমার নিকট আসিবে সেই দিন উহারা কত স্পষ্ট শুনিবে ও দেখিবে! কিন্তু জালিমরা আজ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।
১৯-৩৯ : উহাদেরকে সতর্ক করিয়া দাও পরিতাপ দিবস সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হইয়া যাইবে। এখন উহারা গাফিল এবং উহারা বিশ্বাস করে না।
১৯-৪০ : নিশ্চয়ই পৃথিবীর ও উহার উপর যাহারা আছে তাহাদের চূড়ান্ত মালিকানা আমারই রহিবে এবং উহারা আমারই নিকট প্রত্যানীত হইবে।
১৯-৪১ : স্মরণ কর, এই কিতাবে উল্লিখিত ইব্রাহীমের কথা; সে ছিলো সত্যনিষ্ঠ, নবী।
১৯-৪২ : যখন সে তাহার পিতাকে বলিল, ‘হে আমার পিতা! তুমি তাহার ‘ইবাদত কর কেন যে শুনে না, দেখে না এবং তোমার কোনই কাজে আসে না?’
১৯-৪৩ : ‘হে আমার পিতা! আমার নিকট তো আসিয়াছে জ্ঞান যাহা তোমার নিকট আসে নাই; সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাইব।
১৯-৪৪ : ‘হে আমার পিতা! শয়তানের ‘ইবাদত করিও না। শয়তান তো দয়াময়ের অবাধ্য।
১৯-৪৫ : ‘হে আমার পিতা! আমি তো আশংকা করি যে, তোমাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করিবে, তখন তুমি হইয়া পড়িবে শয়তানের বন্ধু।’
১৯-৪৬ : পিতা বলিল, ‘হে ইব্রাহীম! তুমি কি আমার দেব - দেবী হইতে বিমুখ? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও তবে আমি প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করিবই; তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট হইতে দূর হইয়া যাও।’
১৯-৪৭ : ইব্রাহীম বলিল, ‘তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিব, নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল।
১৯-৪৮ : ‘আমি তোমাদের হইতে ও তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদের ‘ইবাদত কর তাহাদের হইতে পৃথক হইতেছি; আমি আমার প্রতিপালককে আহ্বান করি; আশা করি, আমার প্রতিপালককে আহ্বান করিয়া আমি ব্যর্থকাম হইব না।’
১৯-৪৯ : অতঃপর সে যখন তাহাদের হইতে ও তাহারা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদের ‘ইবাদত করিত সেই সকল হইতে পৃথক হইয়া গেল তখন আমি তাহাকে দান করিলাম ইসহাক ও ইয়া‘কূব এবং প্রত্যেককে নবী করিলাম।
১৯-৫০ : এবং তাহাদেরকে আমি দান করিলাম আমার অনুগ্রহ ও তাহাদের নাম - যশ সমুচ্চ করিলাম।
১৯-৫১ : স্মরণ কর, এই কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল বিশেষ মনোনীত এবং সে ছিল রাসূল, নবী।
১৯-৫২ : তাহাকে আমি আহ্বান করিয়াছিলাম আত্ তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হইতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আল আলাপে তাহাকে নৈকট্য দান করিয়াছিলাম।
১৯-৫৩ : আমি নিজ অনুগ্রহে তাহাকে দিলাম তাহার ভ্রাতা হারূনকে নবীরূপে।
১৯-৫৪ : স্মরণ কর, এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা, সে তো ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল, নবী;
১৯-৫৫ : সে তাহার পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তাহার প্রতিপালকের সন্তোষভাজন।
১৯-৫৬ : স্মরণ কর, এই কিতাবে ইদ্রীসের কথা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ, নবী;
১৯-৫৭ : এবং আমি তাহাকে উন্নীত করিয়াছিলাম উচ্চ মর্যাদায়।
১৯-৫৮ : ইহারাই তাহারা, নবীদের মধ্যে যাহাদেরকে আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিয়াছেন, আদমের বংশ হইতে ও যাহাদেরকে আমি সূরা নূহের সঙ্গে নৌকায় আরোহণ করাইয়াছিলাম এবং ইব্রাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত ও যাহাদেরকে আমি পথনির্দেশ করিয়াছিলাম ও মনোনীত করিয়াছিলাম; তাহাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হইলে তাহারা সিজ্দায় লুটাইয়া পড়িত ক্রন্দন করিতে করিতে।
১৯-৫৯ : উহাদের পরে আসিল অপদার্থ পরবর্তীরা, তাহারা সালাত নষ্ট করিল ও লালসা - পরবশ হইল। সুতরাং উহারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে,
১৯-৬০ : কিন্তু উহারা নহে - যাহারা তওবা করিয়াছে, ঈমান আনিয়াছে ও সৎকর্ম করিয়াছে। উহারা তো জান্নাতে প্রবেশ করিবে। উহাদের প্রতি কোন জুলুম করা হইবে না।
১৯-৬১ : ইহা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁহার বান্দাদেরকে দিয়াছেন। তাঁহার প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।
১৯-৬২ : সেখানে তাহারা ‘শান্তি’ ব্যতীত কোন অসার বাক্য শুনিবে না এবং সেখানে সকাল - সন্ধ্যা তাহাদের জন্য থাকিবে জীবনোপকরণ।
১৯-৬৩ : এই সেই জান্নাত, যাহার অধিকারী করিব আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদেরকে।
১৯-৬৪ : ‘আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না; যাহা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আছে ও যাহা এই দুই - এর অন্তর্বর্তী তাহা তাঁহারই এবং আপনার প্রতিপালক ভুলিবার নন।’
১৯-৬৫ : তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও তাহাদের অন্তর্বর্তী যাহা কিছু, তাহার প্রতিপালক। সুতরাং তাঁহারই ‘ইবাদত কর এবং তাঁহার ‘ইবাদতে ধৈর্যশীল থাক। তুমি কি তাঁহার সমগুণসম্পন্ন কাহাকেও জান?
১৯-৬৬ : মানুষ বলে, ‘আমার মৃত্যু হইলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হইব?’
১৯-৬৭ : মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাহাকে পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি যখন সে কিছুই ছিল না?
১৯-৬৮ : সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের। আমি তো উহাদেরকে এবং শয়তানদেরকেসহ একত্র সমবেত করিবই ও পরে আমি উহাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করিবই।
১৯-৬৯ : অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাহাকে টানিয়া বাহির করিবই।
১৯-৭০ : এবং আমি তো উহাদের মধ্যে যাহারা জাহান্নামে প্রবেশের অধিকতর যোগ্য তাহাদের বিষয় ভাল জানি।
১৯-৭১ : এবং তোমাদের প্রত্যেকেই উহা অতিক্রম করিবে; ইহা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।
১৯-৭২ : পরে আমি মুত্তাকীদেরকে উদ্ধার করিব এবং জালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় রাখিয়া দিব।
১৯-৭৩ : উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্ত হইলে কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘দুই দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসাবে উত্তম?’
১৯-৭৪ : উহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি - যাহারা উহাদের অপেক্ষা সম্পদ ও বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল।
১৯-৭৫ : বল, ‘যাহারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাহাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন যতক্ষণ না তাহারা, যে বিষয়ে তাহাদেরকে সতর্ক করা হইতেছে তাহা প্রত্যক্ষ করিবে, উহা শাস্তি হউক অথবা কিয়ামতই হউক। অতঃপর তাহারা জানিতে পারিবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল।
১৯-৭৬ : এবং যাহারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাহাদেরকে অধিক হিদায়াত দান করেন; এবং স্থায়ী সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসাবেও শ্রেষ্ঠ।
১৯-৭৭ : তুমি কি লক্ষ্য করিয়াছ সেই ব্যক্তিকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করিয়াছে এবং সে বলে, ‘আমাকে ধনসম্পদ ও সন্তান - সন্ততি দেওয়া হইবেই?’
১৯-৭৮ : সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হইয়াছে অথবা দয়াময়ের নিকট হইতে প্রতিশ্রুতি লাভ করিয়াছে?
১৯-৭৯ : কখনই নহে, তাহারা যাহা বলে আমি তাহা লিখিয়া রাখিব এবং তাহাদের শাস্তি বৃদ্ধি করিতে থাকিব।
১৯-৮০ : সে যে বিষয়ের কথা বলে তাহা থাকিবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসিবে একা।
১৯-৮১ : তাহারা আল্লাহ্ ব্যতিত অন্য ইলাহ্ গ্রহন করে এইজন্য, যাহাতে উহারা তাদের সহায় হয় ;
১৯-৮২ : কখনই নহে; উহারা তো তাহাদের ‘ইবাদত অস্বীকার করিবে এবং তাহাদের বিরোধী হইয়া যাইবে।
১৯-৮৩ : তুমি কি লক্ষ্য কর নাই যে, আমি কাফিরদের জন্য শয়তানদেরকে ছাড়িয়া রাখিয়াছি উহাদেরকে মন্দ কর্মে বিশেষভাবে প্রলুব্ধ করিবার জন্য?
১৯-৮৪ : সুতরাং তাহাদের বিষয়ে তুমি তাড়াতাড়ি করিও না। আমি তো গণনা করিতেছি উহাদের নির্ধারিত কাল,
১৯-৮৫ : যেদিন দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করিব,
১৯-৮৬ : এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণাতুর অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকাইয়া লইয়া যাইব।
১৯-৮৭ : যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়াছে, সে ব্যতীত অন্য কাহারও সুপারিশ করিবার ক্ষমতা থাকিবে না।
১৯-৮৮ : তাহারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন।’
১৯-৮৯ : তোমরা তো এমন এক জঘন্য বিষয়ের অবতারণা করিয়াছ;
১৯-৯০ : যাহাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হইয়া যাইবে, পৃথিবী খণ্ড - বিখণ্ড হইবে ও পর্বতমণ্ডলী চূর্ণ - বিচূর্ণ হইয়া আপতিত হইবে,
১৯-৯১ : যেহেতু তাহারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে।
১৯-৯২ : অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভন নহে।
১৯-৯৩ : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেহ নাই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হইবে না।
১৯-৯৪ : তিনি তাহাদেরকে পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছেন এবং তিনি তাহাদেরকে বিশেষভাবে গণনা করিয়াছেন,
১৯-৯৫ : এবং কিয়ামত দিবসে উহাদের সকলেই তাঁহার নিকট আসিবে একাকী অবস্থায়।
১৯-৯৬ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাহাদের জন্য সৃষ্টি করিবেন ভালবাসা।
১৯-৯৭ : আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করিয়া দিয়াছি যাহাতে তুমি উহা দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং বিতণ্ডাপ্রবণ সম্প্রদায়কে উহা দ্বারা সতর্ক করিতে পার।
১৯-৯৮ : তাহাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি! তুমি কি তাহাদের কাহাকেও দেখিতে পাও অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনিতে পাও?