দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে,
নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন১৫-১ : আলিফ - লাম - রা, এইগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের।
১৫-২ : কখনও কখনও কাফিররা আকাঙ্ক্ষা করিবে যে, তাহারা যদি মুসলিম হইত!
১৫-৩ : উহাদেরকে ছাড়, উহারা খাইতে থাকুক, ভোগ করিতে থাকুক এবং আশা উহাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক; অচিরেই উহারা জানিতে পারিবে।
১৫-৪ : আমি যে কোন জনপদকে ধ্বংস করিয়াছি তাহার জন্য ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল।
১৫-৫ : কোন জাতি তাহার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্নিত করিতে পারে না, বিলম্বিতও করিতে পারে না।
১৫-৬ : উহারা বলে, ‘ওহে, যাহার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হইয়াছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।
১৫-৭ : ‘তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদের নিকট ফিরিশ্তাগণকে উপস্থিত করিতেছ না কেন?’
১৫-৮ : আমি ফিরিশ্তাগণকে প্রেরণ করি না যথার্থ কারণ ব্যতীত; ফিরিশ্তাগণ উপস্থিত হইলে উহারা অবকাশ পাইবে না।
১৫-৯ : আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক।
১৫-১০ : তোমার পূর্বে আমি আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠাইয়াছিলাম।
১৫-১১ : তাহাদের নিকট আসে নাই এমন কোন রাসূল যাহাকে তাহারা ঠাট্টা - বিদ্রপ করিত না।
১৫-১২ : এইভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে উহা সঞ্চার করি,
১৫-১৩ : ইহারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনিবে না এবং অতীতে পূর্ববর্তীদেরও এই আচরণ ছিল।
১৫-১৪ : যদি উহাদের জন্য আকাশের দুয়ার খুলিয়া দেই এবং উহারা সাআর্ রাদিন উহাতে আরোহণ করিতে থাকে,
১৫-১৫ : তবুও উহারা বলিবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হইয়াছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।’
১৫-১৬ : আমি আকাশে গ্রহ - নক্ষত্র সৃষ্টি করিয়াছি এবং উহাকে সুশোভিত করিয়াছি দর্শকদের জন্য;
১৫-১৭ : এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হইতে আমি উহাকে রক্ষা করিয়া থাকি;
১৫-১৮ : কিন্তু কেহ চুরি করিয়া সংবাদ শুনিতে চাহিলে উহার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।
১৫-১৯ : আর পৃথিবী, উহাকে আমি বিস্তৃত করিয়াছি, উহাতে পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছি; এবং আমি উহাতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করিয়াছি সুপরিমিতভাবে,
১৫-২০ : এবং উহাতে জীবিকার ব্যবস্থা করিয়াছি তোমাদের জন্য, আর তোমরা যাহাদের জীবিকাদাতা নও তাহাদের জন্যও।
১৫-২১ : আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার এবং আমি উহা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করিয়া থাকি।
১৫-২২ : আমি বৃষ্টি - গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, অতঃপর আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি এবং উহা তোমাদেরকে পান করিতে দেই; আর তোমরা উহার ভাণ্ডার রক্ষক নও।
১৫-২৩ : আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।
১৫-২৪ : তোমাদের মধ্য হইতে পূর্বে যাহারা গত হইয়াছে আমি তাহাদেরকে জানি এবং পরে যাহারা আসিবে তাহাদেরকেও জানি।
১৫-২৫ : তোমার প্রতিপালকই উহাদেরকে সমবেত করিবেন; তিনি তো প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
১৫-২৬ : আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হইতে,
১৫-২৭ : এবং ইহার পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি আল জিন অত্যুষ্ণ অগ্নি হইতে।
১৫-২৮ : স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশ্তাগণকে বলিলেন, ‘আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হইতে মানুষ সৃষ্টি করিতেছি;
১৫-২৯ : ‘যখন আমি উহাকে সুঠাম করিব এবং উহাতে আমার পক্ষ হইতে রূহ্ সঞ্চার করিব তখন তোমরা উহার প্রতি সিজ্দাবনত হইও’,
১৫-৩০ : তখন ফিরিশ্তাগণ সকলেই একত্রে সিজ্দা করিল,
১৫-৩১ : ইবলীস ব্যতীত, সে সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইতে অস্বীকার করিল।
১৫-৩২ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘হে ইব্লিস তোমার কি হইল যে, তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইলে না?’
১৫-৩৩ : সে বলিল, ‘আপনি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হইতে যে মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন আমি তাহাকে সিজ্দা করিবার নহি।’
১৫-৩৪ : তিনি বলিলেন, ‘তবে তুমি এখান হইতে বাহির হইয়া যাও, কারণ তুমি তো অভিশপ্ত;
১৫-৩৫ : ‘এবং কর্মফল দিবস পর্যন্ত অবশ্যই তোমার প্রতি রহিল লা‘নত।’
১৫-৩৬ : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।’
১৫-৩৭ : তিনি বলিলেন, ‘যাহাদেরকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইলে,
১৫-৩৮ : ‘অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’
১৫-৩৯ : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করিলেন তজ্জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করিয়া তুলিব এবং আমি উহাদের সকলকেই বিপথগামী করিব,
১৫-৪০ : ‘তবে উহাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত।’
১৫-৪১ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘ইহাই আমার নিকট পৌঁছিবার সরল পথ,
১৫-৪২ : ‘বিভ্রান্তদের মধ্যে যাহারা তোমার অনুসরণ করিবে তাহারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকিবে না;
১৫-৪৩ : ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাহাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান,
১৫-৪৪ : ‘উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে।’
১৫-৪৫ : মুত্তাকীরা থাকিবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে।
১৫-৪৬ : তাহাদেরকে বলা হইবে, ‘তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে উহাতে প্রবেশ কর।’
১৫-৪৭ : আমি তাহাদের অন্তর হইতে বিদ্বেষ দূর করিব; তাহারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হইয়া আসনে অবস্থান করিবে,
১৫-৪৮ : সেখানে তাহাদেরকে অবসোয়াদ স্পর্শ করিবে না এবং তাহারা সেই স্থান হইতে বহিষ্কৃতও হইবে না।
১৫-৪৯ : আমার বান্দাদেরকে বলিয়া দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু,
১৫-৫০ : এবং আমার শাস্তি - উহা অতি মর্মন্তুদ শাস্তি!
১৫-৫১ : আর উহাদেরকে বল, ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা,
১৫-৫২ : যখন উহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, ‘সালাম’, তখন সে বলিয়াছিল, ‘আমরা তো তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।’
১৫-৫৩ : উহারা বলিল, ‘ভয় করিও না, আমরা তো তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিতেছি।’
১৫-৫৪ : সে বলিল, ‘তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিতেছ আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কী বিষয়ে শুভ সংবাদ দিতেছ?’
১৫-৫৫ : উহারা বলিল, ‘আমরা তোমাকে সত্য সংবাদ দিতেছি; সুতরাং তুমি হতাশ হইও না।’
১৫-৫৬ : সে বলিল, ‘যাহারা পথভ্রষ্ট তাহারা ব্যতীত আর কে তাহার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হইতে হতাশ হয়?’
১৫-৫৭ : সে বলিল, ‘হে ফিরিশ্তাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে?’
১৫-৫৮ : উহারা বলিল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হইয়াছে -
১৫-৫৯ : ‘তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই ইহাদের সকলকে রক্ষা করিব,
১৫-৬০ : ‘কিন্তু তাহার স্ত্রীকে নহে; আমরা স্থির করিয়াছি যে, সে অবশ্যই পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
১৫-৬১ : ফিরিশ্তাগণ যখন লূত - পরিবারের নিকট আসিল,
১৫-৬২ : তখন লূত বলিল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক।’
১৫-৬৩ : তাহারা বলিল, ‘না, উহারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাহাই লইয়া আসিয়াছি;
১৫-৬৪ : ‘আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ লইয়া আসিয়াছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী;
১৫-৬৫ : ‘সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বাহির হইয়া পড় এবং তুমি তাহাদের পশ্চাদনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেহ যেন পিছন দিকে না তাকায়; তোমাদেরকে যেখানে যাইতে বলা হইতেছে তোমরা সেখানে চলিয়া যাও।’
১৫-৬৬ : আমি তাহাকে এই বিষয়ে ফায়সালা জানাইয়া দিলাম যে, প্রত্যূষে উহাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হইবে।
১৫-৬৭ : নগরবাসিগন উল্লসিত হইয়া উপস্থিত হইল।
১৫-৬৮ : সে বলিল, ‘উহারা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইয্যত করিও না।
১৫-৬৯ : ‘তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর ও আমাকে হেয় করিও না।’
১৫-৭০ : উহারা বলিল, ‘আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করি নাই?’
১৫-৭১ : লূত বলিল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করিতে চাও তবে আমার এই কন্যাগণ রহিয়াছে।’
১৫-৭২ : তোমার জীবনের শপথ, উহারা তো মত্ততায় বিমূঢ় হইয়াছে।
১৫-৭৩ : অতঃপর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল;
১৫-৭৪ : আর আমি জনপদকে উল্টাইয়া উপর নীচ করিয়া দিলাম এবং উহাদের উপর প্রস্তর - কংকর বর্ষণ করিলাম।
১৫-৭৫ : অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে পর্যবেক্ষণ - শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য।
১৫-৭৬ : উহা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান।
১৫-৭৭ : অবশ্যই ইহাতে মু’মিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন।
১৫-৭৮ : আর ‘আয়কা’বাসীরাও তো ছিল সীমালংঘনকারী,
১৫-৭৯ : সুতরাং আমি উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি, অবশ্য উভয়টিই প্রকাশ্য পথিপার্শ্বে অবস্থিত।
১৫-৮০ : আল হিজরবাসিগণও রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল;
১৫-৮১ : আমি উহাদেরকে আমার নিদর্শন দিয়াছিলাম, কিন্তু উহারা তাহা উপেক্ষা করিয়াছিল।
১৫-৮২ : উহারা পাহাড় কাটিয়া গৃহ নির্মাণ করিত নিরাপদ বাসের জন্য।
১৫-৮৩ : অতঃপর প্রভাতকালে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল।
১৫-৮৪ : সুতরাং উহারা যাহা অর্জন করিত তাহা উহাদের কোন কাজে আসে নাই।
১৫-৮৫ : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করি নাই এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সঙ্গে উহাদেরকে ক্ষমা কর।
১৫-৮৬ : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী।
১৫-৮৭ : আমি তো তোমাকে দিয়াছি সাত আয়াত যাহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত হয় এবং দিয়াছি মহান কুরআন।
১৫-৮৮ : আমি তাহাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ - বিলাসের যে উপকরণ দিয়াছি, তাহার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করিও না। তাহাদের জন্য তুমি দুঃখ করিও না; তুমি মু’মিনদের জন্য তোমার পক্ষপুট অবনমিত কর,
১৫-৮৯ : এবং বল, ‘আমি তো কেবল এক প্রকাশ্য সতর্ককারী।’
১৫-৯০ : যেভাবে আমি অবতীর্ণ করিয়াছিলাম বিভক্তকারীদের উপর;
১৫-৯১ : যাহারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করিয়াছে।
১৫-৯২ : সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি উহাদের সকলকে প্রশ্ন করিবই,
১৫-৯৩ : সেই বিষয়ে, যাহা উহারা করে।
১৫-৯৪ : অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হইয়াছ তাহা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা কর।
১৫-৯৫ : আমিই যথেষ্ট তোমার জন্য বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে,
১৫-৯৬ : যাহারা আল্লাহ্র সঙ্গে অপর ইলাহ্ নির্ধারণ করিয়াছে। সুতরাং শীঘ্রই ইহারা জানিতে পারিবে।
১৫-৯৭ : আমি তো জানি, উহারা যাহা বলে তাহাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়;
১৫-৯৮ : সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও;
১৫-৯৯ : তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর।