সূরা আল মুজাদালা

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে,

নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১ : আল্লাহ্‌ অবশ্যই শুনিয়াছেন সেই নারীর কথা, যে তাহার স্বামীর বিষয়ে তোমার সঙ্গে বাদানুবাদ করিতেছে এবং আল্লাহ্‌র নিকটও ফরিয়াদ করিতেছে। আল্লাহ্‌ তোমাদের কথোপকথন শোনেন, আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-২ : তোমাদের মধ্যে যাহারা নিজেদের স্ত্রীগণের সঙ্গে যিহার করে, তাহারা জানিয়া রাখুক - তাহাদের স্ত্রীগণ তাহাদের মাতা নন, যাহারা তাহাদেরকে জন্মদান করে কেবল তাহারাই তাহাদের মাতা; উহারা তো অসঙ্গত ও অসত্য কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৩ : যাহারা নিজেদের স্ত্রীগণের সঙ্গে যিহার করে এবং পরে উহাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করিবার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করিতে হইবে, ইহা দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেওয়া যাইতেছে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্‌ তাহার খবর রাখেন।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৪ : কিন্তু যাহার এ সামর্থ্য থাকিবে না, একে অপরকে স্পর্শ করিবার পূর্বে তাহাকে একাদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করিতে হইবে ; যে তাহাতেও অসমর্থ, সে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে খাওয়াইবে; ইহা এইজন্য যে, তোমরা যেন আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন কর। এইগুলি আল্লাহ্‌র নির্ধারিত বিধান; কাফিরদের জন্য রহিয়াছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৫ : যাহারা আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহাদেরকে অপদস্থ করা হইবে যেমন অপদস্থ করা হইয়াছে তাহাদের পূর্ববর্তীদেরকে; আমি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করিয়াছি; কাফিরদের জন্য রহিয়াছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি -

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৬ : সেই দিন, যেদিন উহাদের সকলকে একত্রে উত্থিত করা হইবে এবং উহাদেরকে জানাইয়া দেওয়া হইবে যাহা উহারা করিত; আল্লাহ্‌ উহার হিসাব রাখিয়াছেন, আর উহারা তাহা বিস্মৃত হইয়াছে। আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৭ : তুমি কি লক্ষ্য কর না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে আল্লাহ্‌ তাহা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাহাতে চতুর্থ জন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাহাতে ষষ্ঠ জন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন না। উহারা এতদপেক্ষা কম হউক বা বেশি হউক তিনি তো তাহাদের সঙ্গেই আছেন, উহারা যেখানেই থাকুক না কেন। অতঃপর উহারা যাহা করে, তিনি উহাদেরকে কিয়ামতের দিন তাহা জানাইয়া দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ র্সববিষয়ে সম্যক অবগত।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৮ : তুমি কি তাহাদেরকে লক্ষ্য কর না, যাহাদেরকে গোপন পরামর্শ করিতে নিষেধ করা হইয়াছিল? অতঃপর উহারা যাহা নিষিদ্ধ তাহারই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্য কানাকানি করে। উহারা যখন তোমার নিকট আসে তখন উহারা তোমাকে এমন কথা দ্বারা অভিবাদন করে যদ্দ্বারা আল্লাহ্‌ তোমাকে অভিবাদন করেন নাই। উহারা মনে মনে বলে, ‘আমরা যাহা বলি তাহার জন্য আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন?’ জাহান্নামই উহাদের জন্য যথেষ্ট, যেখানে উহারা প্রবেশ করিবে, কত নিকৃষ্ট সেই আবাস!

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-৯ : হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ কর, সে পরামর্শ যেন পাপাচরণ, সীমালংঘন ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কে না হয়। তোমরা কল্যাণকর কাজ ও তাক্ওয়া অবলম্বনের পরামর্শ করিও, এবং ভয় কর আল্লাহ্‌কে যাঁহার নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হইবে।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১০ : শয়তানের প্ররোচনায় হয় এই গোপন পরামর্শ মু’মিনদেরকে দুঃখ দেওয়ার জন্য। তবে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ব্যতীত শয়তান তাহাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। মু’মিনদের কর্তব্য আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর করা।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১১ : হে মু’মিনগণ! যখন তোমাদেরকে বলা হয়, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করিয়া দাও, তখন তোমরা স্থান করিয়া দিও, আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করিয়া দিবেন এবং যখন বলা হয়, ‘উঠিয়া যাও’, তোমরা উঠিয়া যাইও। তোমাদের মধ্যে যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং যাহাদেরকে জ্ঞান দান করা হইয়াছে আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করিবেন; তোমরা যাহা কর আল্লাহ্‌ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১২ : হে মু’মিনগণ! তোমরা রাসূলের সঙ্গে চুপি চুপি কথা বলিতে চাহিলে তাহার পূর্বে সোয়াদাকা প্রদান করিবে, ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয় ও পরিশোধক ; যদি তাহাতে অক্ষম হও, আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৩ : তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলিবার পূর্বে সোয়াদাকা প্রদানকে কষ্টকর মনে কর! যখন তোমরা সোয়াদাকা দিতে পারিলে না, আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে ক্ষমা করিয়া দিলেন, তখন তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য কর। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্‌ তাহা সম্যক অবগত।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৪ : তুমি কি তাহাদের প্রতি লক্ষ্য কর নাই যাহারা, আল্লাহ্‌ যে সম্প্রদায়ের প্রতি রুষ্ট, তাহাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ? উহারা তোমাদের দলভুক্ত নয়, তাহাদের দলভুক্তও নয় এবং উহারা জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা শপথ করে।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৫ : আল্লাহ্‌ উহাদের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছেন কঠিন শাস্তি। উহারা যাহা করে তাহা কত মন্দ !

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৬ : উহারা উহাদের শপথগুলিকে ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে, আর উহারা আল্লাহ্‌র পথ হইতে নিবৃত্ত করে; অতএব উহাদের জন্য রহিয়াছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৭ : আল্লাহ্‌র শাস্তির মুকাবিলায় উহাদের ধন - সম্পদ ও সন্তান - সন্ততি উহাদের কোন কাজে আসিবে না; উহারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে উহারা স্থায়ী হইবে।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৮ : যে দিন আল্লাহ্‌ পুনরুত্থিত করিবেন উহাদের সকলকে, তখন উহারা আল্লাহ্‌র নিকট সেইরূপ শপথ করিবে যেইরূপ শপথ তোমাদের নিকট করে এবং উহারা মনে করে যে, ইহাতে উহারা ভাল কিছুর উপর রহিয়াছে। সাবধান! উহারাই তো প্রকৃত মিথ্যাবাদী।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-১৯ : শয়তান উহাদের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়াছে ; ফলে উহাদেরকে ভুলাইয়া দিয়াছে আল্লাহ্‌র স্মরণ। উহারা শয়তানের দল। সাবধান ! শয়তানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-২০ : যাহারা আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তাহারা হইবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-২১ : আল্লাহ্‌ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন, আমি অবশ্যই বিজয়ী হইব এবং আমার রাসূলগণও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।

সূরা আল মুজাদালা

৫৮-২২ : তুমি পাইবে না আল্লাহ্‌ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়, যাহারা ভালবাসে আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে - হউক না এই বিরুদ্ধাচারীরা তাহাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা ইহাদের জ্ঞাতি - গোত্র। ইহাদের অন্তরে আল্লাহ্‌ সুদৃঢ় করিয়াছেন ঈমান এবং তাহাদেরকে শক্তিশালী করিয়াছেন তাঁহার পক্ষ হইতে রূহ্ দ্বারা। তিনি ইহাদেরকে দাখিল করিবেন জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে ইহারা স্থায়ী হইবে ; আল্লাহ্‌ ইহাদের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন এবং ইহারাও তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট, ইহারাই আল্লাহ্‌র দল। জানিয়া রাখ, আল্লাহ্‌র দলই সফলকাম হইবে।