২২-৪ : তাহার সম্বন্ধে এই নিয়ম করিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, যে কেহ তাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব করিবে সে তাহাকে পথভ্রষ্ট করিবে এবং তাহাকে পরিচালিত করিবে প্রজ্বলিত অগ্নির শাস্তির দিকে।
২২-৫ : হে মানুষ ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিগ্ধ হও তবে অবধান কর - আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি মৃত্তিকা হইতে, তাহার পর শুক্র হইতে, তাহার পর ‘আল আলাকা’ হইতে, তাহার পর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি গোশত্পিণ্ড হইতে - তোমাদের নিকট ব্যক্ত করিবার জন্য, আমি যাহা ইচ্ছা করি তাহা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তাহার পর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বাহির করি, পরে যাহাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কাহারও কাহারও মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাহাকেও কাহাকেও প্রত্যাবৃত্ত করা হয় হীনতম বয়সে, যাহার ফলে উহারা যাহা কিছু জানিত সে সম্বন্ধে উহারা সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, অতঃপর উহাতে আমি বারি বর্ষণ করিলে উহা শস্য - শ্যামলা হইয়া আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ;
২২-৯ : সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকাইয়া লোকদেরকে আল্লাহ্র পথ হইতে ভ্রষ্ট করিবার জন্য। তাহার জন্য লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাহাকে আস্বাদ করাইব দহন - যন্ত্রণা।
২২-১১ : মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্র ‘ইবাদত করে দ্বিধার সঙ্গে; তাহার মঙ্গল হইলে তাহাতে তাহার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটিলে সে তাহার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে ; ইহাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।
২২-১৫ : যে কেহ মনে করে, আল্লাহ্ তাহাকে কখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করিবেন না, সে আকাশের দিকে একটি রজ্জু বিলম্বিত করুক, পরে উহা বিচ্ছিন্ন করুক; অতঃপর দেখুক তাহার প্রচেষ্টা তাহার আক্রোশের হেতু দূর করে কি না।
২২-১৮ : তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সিজ্দা করে যাহা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজ্দা করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হইয়াছে শাস্তি। আল্লাহ্ যাহাকে হেয় করেন তাহার সম্মানদাতা কেহই নাই; আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা তাহা করেন।
২২-১৯ : ইহারা দুইটি বিবদমান পক্ষ, তাহারা তাহাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে ; যাহারা কুফরী করে তাহাদের জন্য প্রস্তুত করা হইয়াছে আগুনের পোশাক, তাহাদের মাথার উপর ঢালিয়া দেওয়া হইবে ফুটন্ত পানি,
২২-২৩ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাহাদেরকে দাখিল করিবেন জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহাদেরকে অলঙ্কৃত করা হইবে স্বর্ণ - কঙ্কন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাহাদের পোশাক - পরিচ্ছদ হইবে রেশমের।
২২-২৫ : যাহারা কুফরী করে এবং মানুষকে নিবৃত্ত করে আল্লাহ্র পথ হইতে ও মসজিদুল হারাম হইতে, যাহা আমি করিয়াছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান, আর যে ইচ্ছা করে সীমালংঘন করিয়া উহাতে পাপ কার্যের, তাহাকে আমি আস্বাদন করাইব মর্মন্তুদ শাস্তির।
২২-২৬ : এবং স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্য নির্ধারণ করিয়া দিয়াছিলাম সেই গৃহের স্থান, তখন বলিয়াছিলাম, ‘আমার সঙ্গে কোন শরীক স্থির করিও না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখিও তাহাদের জন্য যাহারা তাওয়াফ করে এবং যাহারা সালাতে দাঁড়ায়, রুকূ‘ করে ও সিজ্দা করে।
২২-২৭ : এবং মানুষের নিকট হজ্জ - এর ঘোষণা করিয়া দাও, উহারা তোমার নিকট আসিবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রের পিঠে, ইহারা আসিবে দূর - দূরান্তর পথ অতিক্রম করিয়া,
২২-২৮ : যাহাতে তাহারা তাহাদের কল্যাণময় স্থানগুলিতে উপস্থিত হইতে পারে এবং তিনি তাহাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হইতে যাহা রিযিক হিসাবে দান করিয়াছেন উহার উপর নিদির্ষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করিতে পারে। অতঃপর তোমরা উহা হইতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।
২২-৩১ : আল্লাহ্র প্রতি একনিষ্ঠ হইয়া এবং তাঁহার কোন শরীক না করিয়া ; এবং যে কেহ আল্লাহ্র শরীক করে সে যেন আকাশ হইতে পড়িল, অতঃপর পাখি তাহাকে ছোঁ মারিয়া লইয়া গেল, কিংবা বায়ু তাহাকে উড়াইয়া লইয়া গিয়া এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করিল।
২২-৩৪ : আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করিয়া দিয়াছি; তিনি তাহাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়াছেন, সেগুলির উপর যেন তাহারা আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং তাহারই নিকট আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে -
২২-৩৫ : যাহাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করা হইলে, যাহারা তাহাদের বিপদ - আপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাহাদেরকে যে রিযিক দিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে।
২২-৩৯ : যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হইল তাহাদেরকে যাহারা আক্রান্ত হইয়াছে; কারণ তাহাদের প্রতি অত্যাচার করা হইয়াছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাদেরকে সাহায্য করিতে সম্যক সক্ষম;
২২-৪০ : তাহাদেরকে তাহাদের ঘর - বাড়ি হইতে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হইয়াছে শুধু এই কারণে যে, তাহারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন, তাহা হইলে বিধ্বস্ত হইয়া যাইত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসআন্ নাস্থান, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ - যাহাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহ্র নাম। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাকে সাহায্য করেন যে তাঁহাকে সাহায্য করে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
২২-৪১ : আমি ইহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করিলে ইহারা সালাত কায়েম করিবে, যাকাত দিবে এবং সৎকর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎকর্ম নিষেধ করিবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহ্র ইখ্তিয়ারে।
২২-৫২ : আমি তোমার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করিয়াছি তাহাদের কেহ যখনই কিছু আকাঙ্খা করিয়াছে, তখনই শয়তান তাহার আকাঙ্খায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করিয়াছে, কিন্তু শয়তান যাহা প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ্ তাহা বিদূরিত করেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁহার আয়াতসমূহকে সু - প্রতষ্ঠিতি করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়;
২২-৫৩ : ইহা এইজন্য যে, শয়তান যাহা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি উহাকে পরীক্ষাস্বরূপ করেন তাহাদের জন্য যাহাদের অন্তরে ব্যাধি রহিয়াছে ও যাহারা পাষাণ হৃদয়। নিশ্চয়ই জালিমরা দুস্তর মতভেদে রহিয়াছে।
২২-৫৪ : এবং এইজন্যও যে, যাহাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছে তাহারা যেন জানিতে পারে যে, ইহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত সত্য; অতঃপর তাহারা যেন উহাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাহাদের অন্তর যেন উহার প্রতি অনুগত হয়। যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ্ সরল পথে পরিচালিত করেন।
২২-৫৮ : এবং যাহারা আল হিজরত করিয়াছে আল্লাহ্র পথে, অতঃপর নিহত হইয়াছে অথবা মারা গিয়াছে তাহাদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করিবেন; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্, তিনি তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা।
২২-৬০ : ইহাই হইয়া থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হইয়া তুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করিলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হইলে আল্লাহ্ তাহাকে অবশ্যই সাহায্য করিবেন ; আল্লাহ্ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
২২-৬৫ : তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তৎসমুদয়কে এবং তাঁহার নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে? আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাহাতে উহা পতিত না হয় পৃথিবীর উপর তাঁহার অনুমতি ব্যতীত। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
২২-৬৭ : আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত করিয়া দিয়াছি ‘ইবাদত পদ্ধতি - যাহা উহারা অনুসরণ করে। সুতরাং উহারা যেন তোমার সঙ্গে বিতর্ক না করে এই ব্যাপারে। তুমি উহাদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর, তুমি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।
২২-৭১ : এবং উহারা ‘ইবাদত করে আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুর যাহার সম্পর্কে তিনি কোন দলীল প্রেরণ করেন নাই এবং যাহার সম্বন্ধে তাহাদের কোন জ্ঞান নাই। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নাই।
২২-৭২ : এবং উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হইলে তুমি কাফিরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষ লক্ষ্য করিবে। যাহারা উহাদের নিকট আমার আয়াত তিলাওয়াত করে তাহাদেরকে উহারা আক্রমণ করিতে উদ্যত হয়। বল, ‘তবে কি আমি তোমাদেরকে ইহা অপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দিব? - ইহা আগুন। এই বিষয়ে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন কাফিরদেরকে এবং ইহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’
২২-৭৩ : হে মানুষ ! একটি উপমা দেওয়া হইতেছে, মনোযোগ সহকারে উহা শ্রবণ কর : তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাহাদেরকে ডাক তাহারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করিতে পারিবে না, এই উদ্দেশ্যে তাহারা সকলে একত্র হইলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনাইয়া লইয়া যায় তাহাদের নিকট হইতে, ইহাও তাহারা উহার নিকট হইতে উদ্ধার করিতে পারিবে না। অন্বেষক ও অন্বেষিত কতই দুর্বল;
২২-৭৮ : এবং জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করিয়াছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই। ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করিয়াছেন ‘মুসলিম’ এবং এই কিতাবেও ; যাহাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ্কে অবলম্বন কর ; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি !