২০-১০ : সে যখন আগুন দেখিল তখন তাহার পরিবারবর্গকে বলিল, ‘তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখিয়াছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য উহা হইতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনিতে পারিব অথবা আমি আগুনের নিকটে কোন পথনির্দেশ পাইব।’
২০-১৬ : ‘সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে উহাতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হইলে তুমি ধ্বংস হইয়া যাইবে।
২০-১৮ : সে বলিল, ‘উহা আমার লাঠি; আমি ইহাতে ভর দেই এবং ইহা দ্বারা আঘাত করিয়া আমি আমার মেষপালের জন্য বৃক্ষপত্র ফেলিয়া থাকি এবং ইহা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে।’
২০-৩৯ : ‘যে, তুমি তাহাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, অতঃপর উহা দরিয়ায় ভাসাইয়া দাও যাহাতে দরিয়া উহাকে তীরে ঠেলিয়া দেয়, উহাকে আমার শত্রু ও উহার শত্রু লইয়া যাইবে। আমি আমার নিকট হইতে তোমার উপর ভালবাসা ঢালিয়া দিয়াছিলাম, যাহাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’
২০-৪০ : ‘যখন তোমার ভগ্নী আসিয়া বলিল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিয়া দিব কে এই শিশুর ভার লইবে?’ তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরাইয়া দিলাম যাহাতে তাহার চক্ষু জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হইতে মুক্তি দেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করিয়াছি। অতঃপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে, হে মূসা! ইহার পরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হইলে।
২০-৪৭ : সুতরাং তোমরা তাহার নিকট যাও এবং বল, ‘আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল, সুতরাং আমাদের সঙ্গে বনী ইস্রাঈলকে যাইতে দাও এবং তাহাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট আনিয়াছি তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে নিদর্শন এবং শান্তি তাহাদের প্রতি যাহারা অনুসরণ করে সৎপথ।
২০-৫৩ : ‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করিয়াছেন বিছানা এবং উহাতে করিয়া দিয়াছেন তোমাদের চলিবার পথ, তিনি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন।’ এবং আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
২০-৫৮ : ‘আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করিব ইহার অনুরূপ জাদু, সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এক মধ্যবর্তী স্থানে, যাহার ব্যতিক্রম আমরাও করিব না এবং তুমিও করিবে না।’
২০-৭১ : ফির‘আওন বলিল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা মূসাতে বিশ্বাস স্থাপন করিলে! দেখিতেছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়াছে। সুতরাং আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হইতে কর্তন করিবই এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডে শূলবিদ্ধ করিবই এবং তোমরা অবশ্যই জানিতে পারিবে আমাদের মধ্যে কাহার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’
২০-৭২ : তাহারা বলিল, ‘আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন আসিয়াছে তাহার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যাহা তুমি করিতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করিতে পার।’
২০-৭৩ : ‘আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনিয়াছি যাহাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করিতে বাধ্য করিয়াছ তাহা। আর আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’
২০-৭৭ : আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করিয়াছিলাম এই মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে লইয়া রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাহাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়া এক শুষ্ক পথ নির্মাণ কর। পশ্চাৎ হইতে আসিয়া তোমাকে ধরিয়া ফেলা হইবে - এই আশংকা করিও না এবং ভয়ও করিও না।
২০-৮০ : হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু হইতে উদ্ধার করিয়াছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম আত্ তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সাল্ওয়া প্রেরণ করিয়াছিলাম,
২০-৮১ : তোমাদেরকে যাহা দান করিয়াছি তাহা হইতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমালংঘন করিও না, করিলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যাহার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হইয়া যায়।
২০-৮৬ : অতঃপর মূসা তাহার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরিয়া গেল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হইয়া। সে বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেন নাই? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হইয়াছে, না তোমরা চাহিয়াছ তোমাদের প্রতি আপতিত হউক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করিলে?’
২০-৮৭ : উহারা বলিল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করি নাই ; তবে আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা উহা অগ্নিকুন্ড নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে।
২০-৮৮ : ‘অতঃপর সে উহাদের জন্য গড়িল এক গো - বৎস, এক অবয়ব, যাহা হাম্বা রব করিত।’ উহারা বলিল, ‘ইহা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্, কিন্তু মূসা ভুলিয়া গিয়াছে।’
২০-৯৪ : হারূন বলিল, ‘হে আমার সহোদর! আমার শ্মশ্রু ও কেশ ধরিও না। আমি আশংকা করিয়াছিলাম যে, তুমি বলিবে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হও নাই।’
২০-৯৬ : সে বলিল, ‘আমি দেখিয়াছিলাম যাহা উহারা দেখে নাই, অতঃপর আমি সেই দূতের পদচিহ্ন হইতে একমুষ্টি লইয়াছিলাম এবং আমি উহা নিক্ষেপ করিয়াছিলাম; আমার মন আমার জন্য শোভন করিয়াছিল এইরূপ করা।’
২০-৯৭ : মূসা বলিল, ‘দূর হও; তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য ইহাই রহিল যে, তুমি বলিবে, ‘আমি অস্পৃশ্য’, এবং তোমার জন্য রহিল এক নির্দিষ্ট কাল, তোমার বেলায় যাহার ব্যতিক্রম হইবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যাহার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা উহাকে জ্বালাইয়া দিবই, অতঃপর উহাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া সাগরে নিক্ষেপ করিবই।’
২০-১০৮ : সেই দিন উহারা আহ্বানকারীর অনুসরণ করিবে, এই ব্যাপারে এদিক - ওদিক করিতে পারিবে না। দয়াময়ের সম্মুখে সকল শব্দ স্তব্ধ হইয়া যাইবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনিবে না।
২০-১১৪ : আল্লাহ্ অতি মহান, প্রকৃত অধিপতি। তোমার প্রতি আল্লাহ্র ওহী সম্পূর্ণ হইবার পূর্বে কুরআন পাঠে তুমি ত্বরা করিও না এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’
২০-১২১ : অতঃপর তাহারা উভয়ে উহা হইতে ভক্ষণ করিল; তখন তাহাদের লজ্জাস্থান তাহাদের নিকট প্রকাশ হইয়া পড়িল এবং তাহারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করিতে লাগিল। আদম তাহার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করিল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হইল।
২০-১২৩ : তিনি বলিলেন, ‘তোমরা উভয়ে একই সঙ্গে জান্নাত হইতে নামিয়া যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসিলে যে আমার পথ অনুসরণ করিবে সে বিপথগামী হইবে না ও দুঃখ - কষ্ট পাইবে না।
২০-১২৭ : এবং এইভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাহাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তাহার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না। পরকালের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী।
২০-১২৮ : ইহাও কি তাহাদেরকে সৎপথ দেখাইল না যে, আমি ইহাদের পূর্বে ধ্বংস করিয়াছি কত মানবগোষ্ঠী যাহাদের বাসভূমিতে ইহারা বিচরণ করিয়া থাকে? অবশ্যই ইহাতে বিবেকসম্পন্নদের জন্য আছে নিদর্শন।
২০-১৩০ : সুতরাং উহারা যাহা বলে, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাহাতে তুমি সন্তুষ্ট হইতে পার।
২০-১৩১ : তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনও প্রসারিত করিও না উহার প্রতি, যাহা আমি তাহাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসাবে দিয়াছি, তদ্দ্বারা তাহাদেরকে পরীক্ষা করিবার জন্য। তোমার প্রতিপালক - প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।
২০-১৩২ : এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও উহাতে অবিচলিত থাক, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।
২০-১৩৩ : উহারা বলে, ‘সে তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন?’ উহাদের নিকট কি আসে নাই সুস্পষ্ট প্রমাণ যাহা আছে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে?
২০-১৩৪ : যদি আমি উহাদেরকে ইতিপূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করিতাম তবে উহারা বলিত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করিলে না কেন? করিলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হইবার পূর্বে তোমার নিদর্শন মানিয়া চলিতাম।’