১৪-৪ : আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তাহার স্বজাতির ভাষাভাষী করিয়া পাঠাইয়াছি তাহাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করিবার জন্য, আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৪-৯ : ‘তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসে নাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের, সূরা নূহের সম্প্রদায়ের, ‘আদের ও সামূদের এবং তাহাদের পরবর্তীদের? উহাদের বিষয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেহ জানে না।’ উহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ উহাদের রাসূল আসিয়াছিল, উহারা উহাদের হাত উহাদের মুখে স্থাপন করিত এবং বলিত, ‘যাহাসহ তোমরা প্রেরিত হইয়াছ তাহা আমরা অবশ্যই অস্বীকার করি এবং আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রহিয়াছি সে বিষয়ে, যাহার প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহ্বান করিতেছ।’
১৪-১০ : উহাদের রাসূলগণ বলিয়াছিল, আল্লাহ্ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করিবার জন্য এবং নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দিবার জন্য।’ উহারা বলিত, ‘তোমরা তো আমাদেরই মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাহাদের ‘ইবাদত করিত তোমরা তাহাদের ‘ইবাদত হইতে আমাদেরকে বিরত রাখিতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত কর।’
১৪-১১ : উহাদের রাসূলগণ উহাদেরকে বলিত, ‘সত্য বটে, আমরা তোমাদের মত মানুষই কিন্তু আল্লাহ্ তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতীত তোমাদের নিকট প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। আল্লাহ্র উপরই মু’মিনগণের নির্ভর করা উচিত।
১৪-১২ : আমাদের কি হইয়াছে যে, ‘আমরা আল্লাহ্র উপর নির্ভর করিব না? তিনিই তো আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করিয়াছেন। তোমরা আমাদেরকে যে ক্লেশ দিতেছ, আমরা তাহাতে অবশ্যই ধৈর্য ধারন করিব এবং আল্লাহ্রই উপর নির্ভরকারিগন নির্ভর করুক।
১৪-১৭ : যাহা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করিয়া গলাধঃকরণ করিবে এবং উহা গলাধঃকরণ করা প্রায় সহজ হইবে না। সর্বদিক হইতে তাহার নিকট আসিবে মৃত্যুযন্ত্রণা, কিন্তু তাহার মৃত্যু ঘটিবে না এবং ইহার পর কঠোর শাস্তি ভোগ করিতেই থাকিবে।
১৪-১৯ : তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী যথাবিধি সৃষ্টি করিয়াছেন? তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করিতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনিতে পারেন,
১৪-২১ : সকলে আল্লাহ্র নিকট উপস্থিত হইবে। যাহারা অহংকার করিত তখন দুর্বলেরা তাহাদেরকে বলিবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা আল্লাহর শাস্তি হইতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করিতে পারিবে?’ উহারা বলিবে, 'আল্লাহ্ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করিলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করিতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নাই।’
১৪-২২ : যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হইবে তখন শয়তান বলিবে, ‘আল্লাহ্ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহ্বান করিয়াছিলাম এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়াছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করিও না, তোমরা নিজেদেরই প্রতি দোষারোপ কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করিতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করিতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহ্র শরীক করিয়াছিলে আমি তাহা অস্বীকার করিতেছি, জালিমদের জন্য তো মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
১৪-২৩ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহাদেরকে দাখিল করা হইবে জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, সেখানে তাহাদের অভিবাদন হইবে ‘সালাম’।
১৪-২৮ : তুমি কি উহাদেরকে লক্ষ্য কর না, যাহারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং উহারা উহাদের সম্প্রদায়কে নামাইয়া আনে ধ্বংসের ক্ষেত্রে -
১৪-৩১ : আমার বান্দাদের মধ্যে যাহারা মু’মিন তাহাদেরকে তুমি বল, সালাত কায়েম করিতে এবং আমি তাহাদেরকে জীবিকা হিসাবে যাহা দিয়াছি তাহা হইতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করিতে - সেই দিনের পূর্বে যেদিন ক্রয় - বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকিবে না।’
১৪-৩২ : তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়া তদ্দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, যিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করিয়া দিয়াছেন যাহাতে তাঁহার বিধানে উহা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন নদীসমূহকে।
১৪-৩৩ : তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন সূর্য ও চন্দ্রকে, যাহারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন রাত্রি ও দিবসকে।
১৪-৩৪ : এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়াছেন তোমরা তাঁহার নিকট যাহা কিছু চাহিয়াছ তাহা হইতে। তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ গণনা করিলে উহার সংখ্যা নির্ণয় করিতে পারিবে না। মানুষ অবশ্যই অতিমাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।
১৪-৩৬ : ‘হে আমার প্রতিপালক! এই সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করিয়াছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করিবে সে - ই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেহ আমার অবাধ্য হইলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৪-৩৭ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করাইলাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট, হে আমাদের প্রতিপালক! এইজন্য যে, উহারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব তুমি কিছু লোকের অন্তর উহাদের প্রতি অনুরাগী করিয়া দাও এবং ফলাদি দ্বারা উহাদের রিযিকের ব্যবস্থা করিও, যাহাতে উহারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
১৪-৪২ : তুমি কখনও মনে করিও না যে, জালিমরা যাহা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফিল, তবে তিনি উহাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাহাদের চক্ষু হইবে স্থির।
১৪-৪৪ : যেদিন তাহাদের শাস্তি আসিবে সেই দিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, তখন জালিমরা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দিব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করিব।’ তোমরা কি পূর্বে শপথ করিয়া বলিতে না যে, তোমাদের পতন নাই?
১৪-৪৫ : অথচ তোমরা বাস করিতে তাহাদের বাসভূমিতে, যাহারা নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়াছিল এবং তাহাদের প্রতি আমি কি করিয়াছিলাম তাহাও তোমাদের নিকট সুবিদিত ছিল এবং তোমাদের নিকট আমি উহাদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করিয়াছিলাম।
১৪-৫২ : ইহা মানুষের জন্য এক বার্তা, যাহাতে ইহা দ্বারা উহারা সতর্ক হয় এবং জানিতে পারে যে, তিনি একমাত্র ইলাহ্ এবং যাহাতে বোধশক্তি - সম্পন্নেরা উপদেশ গ্রহণ করে।